আলোপৃথিবী

একটি আলোপৃথিবী প্রকাশনা উদ্যোগ

  • হোম
  • আমাদের কথা
  • প্রকাশনা
  • নিয়মাবলী
  • ই- লাইব্রেরি
  • যাপনচিত্রকথা
  • যোগাযোগ
  • মন্তব্য
Home Archive for June 2020


করুণা আবহ


১.

দূরে থাকি
বিচ্ছিন্নতা-আকাঙ্খায়
ভালবেসে
তোমাকে ছোঁবো না

বহুযুগ থেকে বহু স্পর্শক
তোমার মোহের ঘোরে --
ভাঙি আজ
হই অন্তরীণ।

তুমিও চলেছ আকাঙ্খায় পথ ফেলে
কোয়রান্টিনে --
সব ভালো
না বেসে পারো না


২.

বিকেলের রৌদ্রে ঝিলঝিলে মাস্ক পরে বসে থাকা অসচেতন
ধীরে অন্দরে
সতর্কতায় ধুয়ে ধুয়ে খুইয়ে ফেলেছে হাত
সন্ধে নামছে --
আমি উদ্যম হারিয়ে ফেলেছি
বাইরে উঁকি দিয়ে দেখি 
অসহায়তার ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে কেউ বসে আছে কিনা
নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে
অজানায় ড্রপলেট ছড়িয়ে পড়ছে কিনা




৩.

ঘেঁষে ঘেঁষে যাই,
কিন্তু ভাবছি মনে মনে জিরো কনট্যাক্ট
কোথায় লুকিয়ে দেখছ, দ্যাখো, সুহৃদম্।
ধীরে ধীরে প্রকাশ্য গোপন
কী মিশছে এখন অন্দরে --
প্রতিষেধকের নামে ওঁৎ পাতা হৃদয়জীবাণু?

আরো কিছুদিন বেঁচে থাকব --
তোলপাড় করব  মরে থাকা, তোমার আমার




৪.

একটা কিছু ব্যবস্থা করেছি
অভিজ্ঞতার হাতে পায়ে ধরে
বাসা যেন না বাঁধে শরীরে
না খায় যেন হাড়মাংসশ্বাস
বিনিময়ে দেবো যারা পায়নি খেতে
সেই বুভুক্ষু অনুভূতিগুলি
আর কিছু করতে পারি না
এই মহামারী -- দীর্ঘদিন তাকে
স্মৃতি দিয়ে জব্দ করতে চাই।

সূর্যাস্তে গৃহযুদ্ধের ধুলো


এক


কালো বেড়ালই ফিরবে যার লোহার পাঁজরে এক দেশ

গুড়ি দিয়ে ছায়াও ফিরছে। মুখে ছায়ার শেকল

পাথরের ঠোঁটে ফাটা অপেক্ষা আগ্নেয়পাথরের গান

বন্দুকের নল কেটে ভেঁপুর দেবদূত। ছেলেরা উড়ছে
কাঁটাবেঁধা চোখ হাতে মেয়ারা রাস্তার আগমনি
বরফকুচির বাবা-মা জানলার হিমাঙ্কে সরু রাত

মার্বেলগুলির দেশ। খেলাচ্ছল। তলিয়ে গিয়েছিল খাদে




দুই


বেড়ালের ভৌম থেকে রাত সর্ষেফুলের দেশ

মৃত চোখের পাতালে বালি। কাঁটাঝোপ। সাদা সাদা
ভাতের পুকার

সফর ভুতুরে ডাক। ঝিঁঝির সুহানা

ভাঙা দেশ। পথের পাথর। নদীর ফুরনো ঝুমঝুমি

সাঁজোয়ার মরচে শিস বস্তুত প্রাণের আলেয়া




তিন


কাচের আলোয় ঠোঁট চেপে বেড়াল কুয়াশার পট

চামড়ার থলে থেকে হাড়ই বাজাচ্ছে কালো আকাশের ড্রাম

ইস্পাতের লম্বা বিকেল। সূর্যাস্তের পেরেকে টানা ছায়ার জখম

শবের শীৎকার টানা রূপের মেয়েলি
জানলা ফুঁড়ে বিছানা পাতছে

বেড়াল ডাইরি খোলে। ধাতুচুর। লোহার বয়ান




চার


হাঁসের ডিমের রাত। আর সেদ্ধ কুসুম

বেড়াল ভাবছে। গোধূলির থেকে ও বেশি অভিনব কোণ

খেরোর খাতায় শিস। স্যাঁতসেঁতে। পিঁপড়ে ঘুরছে
মাছপোকা ঝিঁঝি সাপের খোলস

নেভা পিলসুজ। নীচে খামের ফসিল। বাবা-গন্ধের ভোর

থাবার অলস শুধু পুরনো সেলাই। মা-নেভা গন্ধের ছকে বুজে

সেদ্ধ কুসুমের দেশ। সহ্যের ঝিনুকে ছন-ছন

গানের পাথরে ছায়া। বরফকালের
বেড়াল আনছে টেনে সিঁড়ির মিথ্যে এক কোণে




পাঁচ


আমার পায়ের ঘুম আঠা তুলে ছাড়িয়ে নিচ্ছে 
বেড়াল। আত্মমৈথুন!

এই প্রথম আলোর সাথে ছুরি টেনে আত্মবিনিময়
গলে যাওয়া পায়ের

মেয়েরা চামড়া তুলে পাঁজরের পাখি দেখেছিল
খুব সন্দেহবশত

সেসব লৌহযুগ। লন্ঠনের নীচে আজ সোঁদাসোঁদা
পৃষ্ঠা উড়ছে

বেড়ালের নখের আয়নায় সেই চিত্রনাট্য শেওলাসংশ্লেষ

তামাকপাতার চাঁদ। ভেঁপু হাতে দৌড়েছিলাম
ক্ষেতের কংকালে ছায়া ফেলে




ছয়


পাতাল অব্দি দেখছে বেড়ালের ভূ-বেদনার থাবা

কাচের অক্ষরে ক্ষীণ এসরাজ বাজছে হাতের শিরায়

ভাবনানিঝ্ঝুম এত ছায়ার বিলিয়ার্ড পিছলে যাচ্ছে
স্রোত থেকে স্রোতে

বেড়ালের নলির রক্তে এই জিভের চুম্বক গেরস্থালির বন

আমারও খুনের শিসে বেড়ালের পাতালজিহ্বার ঘুম
নিরাকার। যৌনসরল


রাতের পরাগ-শরীর


সন্ধ্যের ভাঙা আলোর পাশে বসে
আমার কান্নার নিবিড়তা রোপণ করি
একটা বেদনা-বিপুল নদী ...
দিনান্তের পর ফেরি ছেড়ে গেছে
আমাদের আলোহীন রাস্তায় নিভে গেছে পথ ---
পথের শরীর, দূরে দাঁড়িয়ে থাকা একা ল্যাম্পপোস্ট ---

ক্রমশ আমাদের চোখের গায়ে নীরবতা নেমে আসে
বেজে ওঠে মাঝিদের গান
এরপর আমাদের নুড়ি পথে
হলুদ ফুলের মতো একটা তেজপাতা রঙের বিকেল
কেমন ঝুলন্ত ব্যালকনি থেকে
ধীরে ধীরে জলছবি হয়ে যায়
শান্ত নদীর বুকে ভেসে যায় শূন্য নৌকা ...

আমাদের ফেরিঘাটে তখন পড়ে থাকে ফুরন কাঠামো
দেবতার সমাধি সলীল, একটা ভাঙা সন্ধ্যে

এরপর পাখি ঘরে ফেরে
পাখির পালকের ভাঁজে ডানা বাঁধে রাত
নেমে আসে রাতের পরাগ-শরীর... 




ফেরা


আলপথ ধরে একটা সন্ধ্যার কাছে এসে বসি। 
দেখি সময়ের গলিপথে এক একটা নীল কাশবন চলে যাচ্ছে ...
ছিঁড়ে গেছে নৌকার পাটাতন ---
কয়েকটা ঝুপড়ি কোলাহল ছেড়ে 
শেয়ালকাঁটা ঝোপের মতো আমাদের একান্ত-যাপনের পথে ...

একটা বাঁশের খুঁটির গায়ে জ্যোৎস্না-পৃথিবী এখানে রোজ থামে।
নোঙর ফেলে নদীর বুকে।
তারপর কয়েকটা ফেরি। ডাক-টিকিট। খুচরো পয়সা। 
আমাদের পড়ন্ত জীবন। একটা অনন্ত সন্ধে ...

ছেলেটি বাঁশি বাজাতে বাজাতে দাঁড় টানে। 
মৃদঙ্গ আঁকে জলের বুকে।
আমাদের সে নিয়ে যায় সেই প্রান্তিক মাঠে।
যেখানে একটা স্ট্রিট লাইটের পাশে 
মেহগনি ছায়া পড়ে অন্ধকারের বুকে রাত্রি নামে,
ঘুমন্ত রেলগাড়ি অভিসারে যায়...

সাঁকো ধরে আমরা আবার ফিরে আসি নদীর কাছে।
আমাদের গলির গায়ে তখন অবিকল লেগে থাকে 
সদ্যজাত পাখির মতোই লুটোপুটি খাওয়া একটা অভুক্ত ভোর।




মাঝি


অন্ধকার তার নিজস্ব ভাষায় কথা বলে। নিজস্ব আলোর রঙে এঁকে দেয় সমস্ত মোমরঙের ঘর-বাড়ি। দাঁড়-ভাঙা নৌকার অজস্র বুনন। মাঝি ডিঙি বায়। নিখুঁত সন্তর্পণে মাছের চোখের মতো আলুথালু হয়ে লেপটে থাকে জলে। ক্রমশ গভীর স্রোতে। জলের ঘনত্ব মেপে রূপকথা নগরীর পাড়ে এসে দাঁড়ায় কোনো এক প্রাচীন বৃদ্ধা। হাতে তার জোনাকি-লণ্ঠন। রিনরিন বাঁশফুলের মেদুর মোহ। জল কলকল... মাঝি ডিঙি বায়। নিপুণ সুতোর জালে ক্রয় করে সময়ের কারচুপি। নদীর স্থায়ী বিচরণ। রাতচড়া পাখি ডানা মেলে উড়ে যায় মোমরঙা আকাশের গায়ে। মাঝি তখনও অন্ধকার বুনতে বুনতে ডিঙি বায়। ক্রয় করে শীর্ণ বৃদ্ধার রূপোলি চাহনি। চাল, ডাল, নুনে ঘেরা তাদের যাবতীয় খিদের সংসার।




জীবন 


অনেক দিন পর বৃষ্টি এল। শুকনো লেবুগাছের ডালে ফোঁটা ফোঁটা ঝরে পড়ছে জীবন। নতুন রোয়া হলুদ গাছে উর্বর মাটির মতো উথলে উঠছে কৃষকের ঘর-বাড়ি। কৃষক বধুর নবান্ন হাত। ছড়িয়ে পড়ে মাটির গন্ধ। একটা মুখরিত বৃষ্টিদিনে মেঠোবালক ঘন শ্যামল আকাশের পায়ে পায়ে ছুটে বেড়ায়। থিতু হয়ে বাঁশি বাজায় আষাঢ়ের বুকে। বাঁশির শব্দে নেচে ওঠেন পদাবলির শ্যাম-রাধা। বিদ্যাপতি, জ্ঞানদাস, গোবিন্দদাস। তারপর দিগন্ত রেখা ছুঁয়ে হেঁটে যায় তিলক কাটা বৈষ্ণব-বৈষ্ণবী। রাধেশ্যাম । ব্রজবাসীর বৈষ্ণবীয় দিন। কদম ফুলের পাপড়ির মতো তাদের অবিন্যস্ত জীবন। অখণ্ড ভিক্ষাপাত্র। তাদের ভিক্ষা-পাত্রে ভরা আছে ব্রজলীলা। আউশ ধানে ভরা জীবনের স্বাদ।




শূন্য 


সূর্য অস্ত নামে। লাল-চেলি ডানা মেলে উড়ে যায় পাখি। দিনান্তের পর তারা স্তব্ধতা মেখে শূন্য করে ফিরে যায় তাদের খড়-কুটো যাপন গৃহে। সুপুরি গাছের সারি। মাঠ জুড়ে বিস্তীর্ণ গেরুয়া বিকেল। তারপর ঘরে ফেরে তারা। শুধু ঘনশ্যাম আকাশের গায়ে লেগে থাকে রাধাচূড়া মেঘ। তারা শ্যাম নাম জপে। দু'কলি গান বাঁধে ষোড়শীর বুকে। ভেসে যায় তারা জপমালা মুখে ফেরা পাখিদের ঠোঁটে। বৃদ্ধ শরীর নিয়ে অন্ধ ভিখারি তখনও পথের ধারে বসে থাকে। ঝাঁপ খোলা দোকানির ঘরে ভিক্ষা করে অন্ন। তারপর শূন্য চোখে ফিরে যায় ঘরে। এইভাবে দিন শেষ হয়। রাত শেষ হয়। শূন্য পৃথিবীর বুকে তারা রেখে যায় বেদনার ইতিকথা। অনন্ত শূন্যে ভরা এক শূন্য শূন্য বৃত্তাকার পূর্ণতা।


ভেষজ


পৈরাগের এক হাতে ছিল হালের বুঁটা
অন্য হাতে ঘাসপাতা , শেকড় বাকড়

তার একপথে অজ্ঞানতার নিবিড় আঁধার
অন্যপথে ছিল জলের খোঁজ , জ্ঞানের খোঁজ
সে ভেষজের ভেতর আয়ু ও
মাটির ভেতর সত্যের খোঁজ জারি রেখেছিল

প্রশ্ন তাকে হতাশ করেনি কোনোদিন
সে প্রশ্নের পর প্রশ্নে পা রেখে এগিয়ে যেতে চেয়েছিল
শুকিয়ে ওঠা ধানখেতটির দিকে

সে জানত পৃথিবীতে অমৃত বলে কিছু নেই
কিন্তু বিষ আছে , আর আছে জ্ঞানান্বেষণ
তাই হাতে তুলে দেওয়া বিষ সে পান করেছিল
আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে নয় , পূনর্বার
শরীরের নশ্বরতা প্রমান করার উদ্দেশ্যে




বয়স


এই যে বুড়ি দুহাতে জল ভর্তি বালতি নিয়ে আসছে
তার বয়স একশো বছর
এগারো বছর বয়সে সে বিয়ে হয়ে এ গ্রামে এসেছে
তিনটি গ্রাম পেরিয়ে পায়ে হেঁটে ধানখেতের আল দিয়ে
এই গ্রামগুলির বয়স দেড় হাজার বছর
তার হাতের বালতি দুটির বয়স দুশো বছর
তার শাশুড়ি তাকে বালতি দুটি দিয়ে গেছে
তার নাকে রূপার নাকছাবিটির বয়স পাঁচশো বছর
তার শাশুড়ির শাশুড়ির শাশুড়িরা পরম্পরা অনুসারে
বউদের দিয়ে এসেছে এই নাকছাবি
যে কুয়ো থেকে সে জল আনছে তার বয়স সাতশো বছর
দেড়শো বছর আগে কুয়োটি বাঁধানো হয়েছে ইঁট দিয়ে
কুয়োর পাশে বটগাছটির বয়স হাজার বছর
বটগাছের নীচে কুড়চি আর ধুতুরা ঝোপ
এইসব ঝোপঝাড়গুলির বয়স তিন হাজার বছর
উলটো দিকের চাটান পাথরটির বয়স বারো কোটি বছর




পরম্পরা

দুলালচন্দ্র দাস গুরু প্রেমানন্দের শিষ্য , গুরুর মৃত্যুর পর বর্তমান
আশ্রমধ্যক্ষ । পরম বৈষ্ণব ও ক্রনিক আমাশার রুগি । ঔষধ পথ্য , কৃচ্ছসাধন
কোনো কিছুই কাজে আসেনি । শিষ্যদের সঙ্গে কথা বলে বলতেও মাঝে মাঝে উঠে
যেতে হয় পশ্চিমের জঙ্গলের দিকে ।  এই জঙ্গল , পুষ্করণী তাঁর বড় প্রিয়।

আশ্রমের উঠোনের একদিকে বিশাল নিমগাছ । রাজ্যের পাখির বাসা । চারদিকে
গাছগাছালি । লোকালয় থেকে দূরে আশ্রমটি প্রায় জঙ্গলে ঘেরা ।  সন্ধ্যায়
আরতির শব্দ ও পাখিদের ঘরে ফেরার কলরবে গমগম করছে ।  একটা সান্ধ্য
প্রকৃতিক বন্য সুঘ্রাণ ছড়িয়ে আছে ।

গুরু বলতেন বৈষ্ণবীয় তন্ত্রের গতি বংশপরম্পরায় নয় , গুরুশিষ্য পরম্পরায় ।
 আজ শিষ্যরা প্রায় কেউ আসেননি । তাই মঠ নির্জন । এইসব ভাবতে ভাবতে
দুলালচন্দ্র নিম্ন উদরে বেগ অনুভব করেন । উঠে যেতে যেতে ভাবেন , হে দয়াময়,
হে প্রকৃতি মাতা  - এ পরীক্ষার কি কোনো শেষ নেই ।  বংশ পরম্পরা অতিক্রম
করে গুরুশিষ্য পরম্পরা অবলম্বন মানুষের ইচ্ছাধীন নয় ।




ভাঙা চাটু


ক’বছর আগে কাশিপুরের হাটে বলদ কিনতে গিয়ে জানকির বাপ যে ঢালাই লোহার
চাটুটি কিনে এনেছিল , সেটি এতদিন ঘষা খেতে খেতে অর্ধেক হওয়ার পরও
অব্যাহতি পেল না ।  এখন পাঁশ কাড়ার সময় ছাড়া উনুন আর দেওয়ালের খাঁজটিতে
অন্ধকারে শুয়ে থাকাই তার কাজ ।

পানকৌড়ি আর বালিহাঁসদের সঙ্গে কিছুক্ষন জলসাঁতার ডুবসাঁতার দিয়ে কলসি
কাঁখে ফিরে আসার সময় জানকির মায়ের গেল বছর চৈতমেলার হাটে কেনা তেল মাখা
বাটিটি কলসির মুখে প্রতি ডেগে ঠুনুক ঠুনুক বেজে ওঠে । স্নান সেরে এসে ভাত
বসাবার আগে সে বড় তরফে গেল আগুন চাইতে ।

বড় ভাসুর বৃদ্ধ হয়ে আর এখন খেতবাইদ যায় না , তবু তার কাজের ছুটি নেই ।
উঠোনের একপাশে ভাঙা বেড়া বাঁধতে বাঁধতে সুতো বাঁধা চশমার ফাঁক দিয়ে
জানকির মাকে আসতে দেখে আন্দাজে দুটো গলা খাঁকারি দেয় ।
জানকির মা ভাঙা চাটুতে দুটুকরো জ্বলন্ত আঙরা নিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে পাশ
দিয়ে চলে যায় সট্ সট্ ।




ভাই


ষষ্ঠীচরণ কদাচিৎ বাড়ি ফিরিয়া আসে । সেই কখন কৈশোরবেলায় বাপের সঙ্গে ঝগড়া
করিয়া ঘর ছাড়িয়াছিল , বহুদিন আর ফেরে নাই । অনেকগুলি রহস্যময় বৎসর পার
করিয়া সে ফিরিয়া আসিল । এখন যখনই আসে তখনই বোম্বাই নিবাসী জনোচিত একটি
কালো চশমা দিনরাত তাহার চোখে লাগান থাকে । অনেকে ভুল করিযা ভাবে
রামচন্দ্রপুরে সদ্য চোখ অপারেশন হইয়াছে।

সে ফিরিয়া আসিয়াছে, বৃদ্ধ বাপমাকে ফেলিতে পারে নাই। এখন সে ভাই হইয়াছে।
দুবাই নিবাসী ইব্রাহিমের মাসতুতো ভ্রাতার ভাইগিরির দলে হাপ্তাবাসুলির
কাজ করিয়া থাকে। কাজে নাম করিয়াছে। রোজগার পত্রও ভালো। ছয়মাস নয়মাসে
বাপমাকে টাকা পাঠায়। একটি ছোট একতলা ঘরও বানাইয়াছে। এই বয়সে বাপমা
খাটিয়া খাওয়ার হাত হইতে অব্যাহতি পাইয়াছে । এই বা কম কী। এও তো সকলে পায় না।


চিনতে না পারার খেলাধুলো


১

পাখিলাগা ঝুলবারান্দার দেশে
বর্ণমালা গান গায়

গন্ধলেবুর বিকেল –
কবেকার কথা মনে করে ভাবি 
এই বুঝি
মধুমাখানো জামা কিনে দেবে

আকাশে বিকেল বেজে ছড়িয়ে যাচ্ছে
সুদূরের চৌকো
তুলোর নামতা মোড়া থৈ জল থামিয়ে দেয় পা
অনেকগুলো নোন্‌তা লাগা রুটি
জমিয়ে রাখা বাক্সে ফিরে আসা ওড়ায়

রাত হলে পর, রেললাইনের ঘুমের ভেতর
আস্তে আস্তে 
মায়ের গল্পেরা নেমে এসে পাশে বসে
কপালে হাত দেয়





২

পাতার পাহাড় পেরিয়ে হাত খুলে দিয়েছি মওলা

বিকেলের দিলরুবায় 
ভাঁজ খুলে খুলে 
ছোট ছোট গল্পেরা খেলা করে।

ফাঁক পেলে আলতো করে তুলে নিতে হয়
সন্ধের এমনিটুকু এমন –
জলের আশনাই হয়ে দুলে যাওয়া পথ
চুমু খেলে কাঁদে

পা পেরোতে পেরোতে
নাম না জানা কয়েকজনের
ঘর লেখা ঝিরিঝিরি রাত 
কেমন শ্বাস খুলে নরম

দেখতে না পাওয়া আছিলায়
হোঁচট খাওয়া কথাবার্তার ছায়াঘেরা নিয়ে 
একটা খিদের পুরনো নখ ঘষে গেল
সম্ভবত অনেকগুলো অচেনা প্রচুরে




৩

সাদা ও নরম জলজতায় লেখা থাকে সমস্ত ফিরে আসার সফর...

যেরকম প্রত্যাখ্যানগুলো

ভাঙা সুটকেস, ছেঁড়া রুটি আর ফটোফ্রেমের রাত 
ঘামলাগা রাত থেকে নেমে আসা পাথরেরা
লেপটে থাকে গোপন রাখা কান্নায়

আলোগুলো উষ্ণতা। আলোগুলো খিদে
থালার মতন
রাস্তার অদলে বদলে চুলকাঁটা বাঁকগুলোয় চিঠি বাজে

শহরের ডায়েরি
তারা কেবল চিনতে না পারার খেলাধুলো জানে




৪

লাল মাংসের দাঁত
কাচের রাস্তায় যেতে যেতে দেখছে
ভেজা গাডিবারান্দার কোণে
ঝুলে থাকা ক্যালেণ্ডার

একটা অনেকদিনের পাড়া
একটা অনেকরাতের বারান্দা
একটা তোবড়ানো থালা 
ঘুমের মধ্যে চেটে নেয় নুন আর মধুর আরাম

নাবিকবিহীন জাহাজ থেমেছে একই পর্দায়

বহুদিনের যাওয়া পেরোতে পেরোতে
একা একাই তার খুব একলা লাগছে...




৫

আলোর দোয়াতে ভরে আছে আলোরাই 

এখানে স্পর্শ ভাঙে
এলানোর পরশ হয় ছায়ার বিকেলে

একটা ছাতা লিখব বলে বসে আছি
বসে আছি হে কবে শুনিব তোমার
লেখা আর খেলা পাশাপাশি বসবে 
চুমু খাবে

বসে আছি হে বন্ধ আয়নায়
আয় না...
আঙুলের টক টক স্টপেজে এই যে এসে থামলো শব্দের চুপ
পাখিদের ঝাপসায় এই যে বৃষ্টির দূর বাদাম গাছ
মাঝেমধ্যে মেপে নিচ্ছে রঙ বিজন

কী অভিমান মেয়েটার।
সবটুকু আসতে পারেনি
তবু ধরা পড়া সমস্ত গায়ে ঢালা দোলে
দোল দিচ্ছে থেমে যাওয়ার দোলনায়

বাড়ি ফিরতে চাওয়া একটা লাল ফ্রক 
দেখতে চাইছে
এতগুলো শব্দের ভেতর
চিনতে না পারার খেলাধুলো নিয়ে
কে যে কোথায় শুয়ে আছে  

মুখোশের জ্বর অথবা সর্দিকাশি বিষয়ক


তরুণ কবিকে উপদেশ দেওয়ার প্রচলিত মুদ্রাদোষ আজ আমাদের ছাড়তে হবে। এইকথা একজন প্রবীণ কবিকে মনে রাখতে হবে অভিজ্ঞতার মৌখিক উপদেশ চলতে পারে কিন্তু লিখিত সম্পাদনা না করাই ভালো। আপনার পরিমার্জনায় সেটা কবিতা হিসেবে বেশি গ্রহণযোগ্য হতে পারে কিন্তু তা খাতায় বন্দি থাকুক, পত্রিকার পাতায় নয়। অথচ এই পরিমার্জনার আজও বিরাম নেই। তরুণ কবিটি লেখা সম্পাদনার অছিলায় বাড়তি সুবিধা চাইছেন। খ‍্যাতির একটি শর্টকাট রাস্তায় নেমে ঝোপ বুঝে কোপ মারতে তার দ্বিধা নেই। পাঠকের ছদ্মবেশে সামান্য দালালি করে সেও প্রবীণ কবিকে দুর্বলতার সুযোগে একটা সিঁড়ি হিসেবে ব‍্যবহার করে। তাঁকে দিয়ে সার্টিফিকেট লিখিয়ে নিয়ে গলায় ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় নন্দনকাননে। জীবনের দুএকটি গোপন মুহুর্তের মালা গেঁথে সেও নেমে পড়ে শিষ‍্য জোগাড়ের নতুন খেলায়।

নবীন কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচীর প্রথম কাব‍্যগ্রন্থ 'লেখা' আগাগোড়া সম্পাদনা করে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। যতীন্দ্রমোহন লিখেছেন 'কাটিয়া- ছাঁটিয়া,মাঝে মাঝে দু চার ছত্র নিজে হইতে যোগ করিয়া' কবি তাঁকে উৎসাহিত করেছিলেন। আজকে সদ‍্য লিখতে আসা নবীন কবির এই আমোদ না থাকাই ভালো। বুদ্ধদেব বসু 'কবিতা' পত্রিকায় তরুণ কবি শঙ্খ ঘোষের যে কবিতা ছেপেছিলেন তা ছিল আগাগোড়া সম্পাদিত। এতটাই সম্পাদিত যে শঙ্খ ঘোষ নিজের কবিতা চিনতে পারেন নি। কবিতাটি সম্পাদনার ফলে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হতে পারে কিন্তু সেই কবিতায় তরুণ কবির নিজস্ব আবেগ ও নৈতিক অধিকার ছিল না। অভিমানে শঙ্খ ঘোষ আর কখনও 'কবিতা' পত্রিকায় লেখেন নি। যতীন্দ্রমোহন বাগচীর একটিমাত্র উপন্যাস'পথের সাথী ' আগাগোড়া শরৎচন্দ্র কর্তৃক সম্পাদিত ও সংশোধিত। দেবেশ রায় অনেক তরুণ লেখকের লেখা সংশোধন করে দিতেন। এলিয়টের কাব‍্যগ্রন্থ কীভাবে সম্পাদিত হয়েছিল আমি না জানলেও আপনারা হয়তো জানেন ।

আমার পরিচিত মফস্ সলের এক কবি ও সম্পাদকের একটি কবিতায় 'প্রেয়সী' শব্দটি বাদ দিতে বলেছিলেন প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত। তিনি তা মানেন নি। ফলত 'অলিন্দ' পত্রিকায় তাঁর সেই কবিতা ছাপা হয়নি। দুজনেরই আত্মসম্মান আর রুচিবোধকে আমি শ্রদ্ধা করি। এখানে অহেতুক নির্লজ্জ স্নেহ নেই অথবা উল্টোদিকের খ‍্যাতিলোভী আত্মসমর্পণ নেই। প্রণবেন্দুর একটি কবিতার 'কাম' শব্দটি অনিচ্ছাকৃত ভুলে 'কাজ' ছাপা হয়েছিল 'শতভিষা' পত্রিকায়। সেই বিষাদ থেকেই তিনি হয়তো এই শিক্ষা নিয়েছিলেন। নব্বইয়ের কবিদের একটা বড়ো অংশের কবিতা জয় গোস্বামী কর্তৃক সম্পাদিত ও সংশোধিত। জয়ের কবিতার প্রকট ও প্রচ্ছন্ন ছায়ায় সেইসব কবিতা 'দেশ' পত্রিকার রঙিন পাতায় পাতায় ছড়িয়ে রয়েছে। 'সব এক ধাঁচ,সব এক ছাঁচ কী নিদারুণ দৈন‍্য।' তখন কবিতার যেকোনো পথের শেষ ঠিকানা ছিল গোসাঁইবাগান। জয় গোস্বামীর নিভৃত লালারও অনুবাদ করেছিলেন নব্বইয়ের কবিরা। খুব দ্রুত প্রযুক্তি এসে না পড়লে নব্বইয়ের কবিতা তার স্বতন্ত্র স্বর খুঁজে পেত কিনা সন্দেহ। সদ‍্য লিখতে আসা তরুণদের 'নিজেরও অগোচরে নিজেরই দিকে টেনে নেবার প্রবণতা' প্রায় সব বড়ো কবির মধ্যেই কাজ করে। রবীন্দ্রনাথের ছিল সর্বগ্রাসী প্রভাব। জয়ের ছিল প্রভাব ও প্রতিপত্তি। স্বীকৃতি এবং স্রেফ অস্বীকারের রাজনৈতিক নীরবতা গোপনে অনেকেই টের পেয়েছেন। সেই ইতিহাস কবে আমাদের সামনে আসবে জানি না। আলো ক্রমে আসিবে সে সম্ভাবনা আজও নেই।


সেই কবে পঞ্চাশের শুরুর দিনগুলিতে' কৃত্তিবাস' দ্বিতীয় সংখ‍্যার একটি ছোটো গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধে আমাদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন শান্তিনিকেতনের কবি ও অধ্যাপক সুনীলচন্দ্র সরকার। বলেছিলেন 'কয়েকটি বিশেষ ব‍্যক্তির বৈঠকখানা' থেকে বেরিয়ে আসার কথা। অথচ বাস্তবে হল ঠিক তার উল্টো। পঞ্চাশের অনেক কবির বৈঠকখানা হয়ে উঠল শহর-মফসসলের অনেক তরুণ কবির আশ্রয়। রবিবারের ব‍্যাগ ভরে উঠতে লাগল নানা কিংবদন্তীতে। অনেকেই পেলেন সৎ পরামর্শ, কবিতা বিষয়ে মূল্যবান পথনির্দেশ। অনেক পেলেন আর্থিক সাহায্য,  বিখ্যাত পাক্ষিকে কবিতা প্রকাশের সুযোগ আর পুরস্কারের নমিনেশন। শক্তির সঙ্গে মদ‍্যপান,সুনীলের অহেতুক স্নেহ আর শঙ্খ ঘোষের সৌজন‍্যবোধ - স্মৃতির শরীরে নতুন পালকের জন্ম হল। এই আন্তরিকতাকে অনেক তরুণ কবি পরবর্তীতে সার্টিফিকেট হিসেবে কাজে লাগালেন। শঙ্খ ঘোষের নিভৃত ফোনালাপ, দুএকটি ধূসর পোস্টকার্ড সার্টিফিকেটের মহিমায় হাজির হল আমাদের সামনে।

একজন সদ‍্য লিখতে আসা তরুণ একজন প্রবীণ কবির কাছে আসবে এটাই স্বাভাবিক। শুরুর দিনগুলিতে নানা বিভ্রান্তি,অনিবার্য ডিপ্রেশন তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। অনেক ছোটো ছোটো অপমানে লেখা ছেড়ে দেবার কথা ভাবেন অনেকেই। তখন প্রয়োজন শুশ্রূষা, শিষ‍্য বানানোর ছলনায় অনেক প্রবীণ ভুলে যান সেই কথা। রিলকের মতো তরুণ কবিকে বলতে পারেন না 'আপনাকে উপদেশ দেবার মতো কেউ নেই এবং কেউ আপনাকে সাহায‍্যও করতে পারবে না।' না বললেও মৌখিক সাহায্যটুকু ছাড়া আর কিছু দেওয়ার অধিকার নেই এই বিশ্বাস একজন প্রবীণের থাকা উচিৎ। বড়জোর ছন্দ-মিল বিষয়ে সংশোধন চলতে পারে। কিছু করার বদলে আর একবার তার হাতে তুলে দেওয়া যায় বঙ্কিমচন্দ্রের 'বাঙ্গালার নব‍্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন' অথবা শঙ্খ ঘোষের 'তরুণ কবির স্পর্ধা।' প্রয়োজনে তার হাতে তুলে দেওয়া যায় রণজিৎ দাশের' একটি প্রাচীন ইস্তাহার'ও। কাজ হয়তো তেমন হবে না। ডেঙ্গু নিবারণের সরকারী নির্দেশ কতটুকুই বা আমরা পালন করি। তবুও যেকোনো উপদেশ দেওয়ার আগে সারিয়ে নেওয়া দরকার একজন তরুণ কবির অসুখ ও ছলনার নানা ছদ্মবেশ। গুরু শিষ‍্যর সম্পর্কের রসায়ন নিয়ে অতঃপর আমাদের তেমন কিছু বলার নেই।


টিয়া


আমি যদি হতাম তোতা পাখি
বসতে  পেতাম তোমার বুকের দাঁড়ে
টিয়ার মতোই ঠোঁটও হত লাল
চুমু খেতাম ঠোঁটের নদীর পাড়ে

রক্তারক্তি হতে দিতাম না তো
পক্ষীচঞ্চু কম্র হত সুখে
দুপুরভর সবুজ আমলকী
নম্র হত, নম্র হত বুকে

চমকে উঠে বলতে তুমি, এ কী
অসভ্যতার শেষ বুঝি নেই কোথাও
আমি বলতাম, এ অমানুষিক
তাকিয়ে দেখ দায়ী তোমার তোতা

শাস্তি দেবার সময় তো ঢের পাবে
ওই মুখে কি গালিগালাজ সাজে?
উপুড়চুপুড় বিড়ম্বনার মাঝে
তোমার বুকে তিরতিরে সুখ বাজে।      




গুপ্ত বর্ণালি


তোমার মননে ও 
সোনালি জঙ্ঘায়
গুপ্ত বর্ণালি, 
নাচের মুদ্রায়
তাকে তো দেখা যাবে। 

গ্রীষ্মে দামোদর
রুপোর সুতো, তার 
দগ্ধ বালুচর
একদা বর্ষার 
বিপুলা বিদ্রোহে
ভরবে বন্যার 
পরমা সমারোহে।




তোমার পুরুষ্টু ঊরু


তোমার পুরুষ্টু ঊরু
যা আমাকে উৎপীড়ন করে
একটি আরেকটির উপর বিন্যস্ত

নৃশংসতা তোমার শরীর 
থেকে উঠে আসে 
সান্দ্রতম রাতে     

আনন্দিত নিতম্বের আন্দোলনে
উন্মথিত সুখে।




সামান্য বর্ষণ


বৈশাখীর সামান্য  বর্ষণে
অজানা অরণ্যলতা ফণা তোলে বনে
ফোটে বনফুল
শ্যামলা মেয়ের ছোটো দুল

পাখপাখালির কাকলিতে
বনভূমি স্বরাট সংগীতে

ক্রমে পাক ধরেছে পিয়ালে
দুটি টিয়া বসে মগডালে
তাদের ঠোঁটের রং লাল
তোমার ওষ্ঠেও কবে ফুটবে সকাল?



প্রতিচ্ছবি


শিরীষ গাছের আড়াল থেকে চাঁদ
মঞ্জরিত স্বচ্ছ বাসনায়
প্রাত্যহিকের ঢেকে আর্তনাদ  
ঢলোঢলো দিঘির বুকে চায়  

কী দেখেছ দিঘির বুকে, কবি? 
শাপলাকলির একলা ফুটে ওঠা
নাকি নেহাৎ নিজের প্রতিচ্ছবি
ভেঙে যাচ্ছে -- হয়েও উঠছে গোটা।    



মাতৃদিবস


ঝড় আসছে, জানলা বন্ধ করা দরকার।
এক অসুখের আশঙ্কায়
এ বাড়িতে দীর্ঘদিন বাজে না কলিংবেল!
বৃদ্ধ মা, ডায়াবেটিক বর।

মেয়ে? সে বিদেশে। সামলে নিয়েছে ওরা।
খুলে যাচ্ছে অফিস শপিং-মল। 
মৃত্যু থেকে খুলছে জীবন;

ধুলো জমছে ছবির ফ্রেমে। ডাস্টিং বারণ।
তবু শাশুড়ি-মার ছবির জমা ধুলো
ঝাড়তে ঝাড়তে মনে পড়ল, আজ মাতৃদিবস।

তিনি দূরে গেলেন পোশাক বদলাতে, দুবছর




দরভিশ ঘোর


আমার ঘুমের কোনো রাত্রি নেই
ব্রহ্মমুহূর্ত ছুঁয়ে ছুঁয়ে সময়

ধ্বনি, মন্ত্র, গান, অমনষ্ক ঘুম...

অন্ধকার ফুঁড়ে জেগে ওঠা আহির ভৈরব আলো।
জগজিৎ গাইছেন : 'দর্দ সে মেরা দামন ভর দে
ইয়া আল্লাহ্...'

কোথাও কেউ নেই। কেউ কি ছিল?

ধ্বনির পালকে কে রাখছে দরভিশ ঘোর,
ঘুম

[০৩ মে, ২০২০]




রাইনের কাছাকাছি থাকে মেয়ে


আবার ফিরে যাওয়া মন্থর মুহূর্তে
মুহূর্ত সময়ের ভগ্নাংশে বায়বীয়, তবু
শেষ হয় না, জুড়তে থাকে পরতে পরতে।

ধ্যাননিমগ্ন কম্বল আসনটি কি আলাদিনের
উড়ন্ত গালিচা না লুফৎআনসা?
ভাববো দ্রুতগামী কে? 
আমি কি পারদর্শী? আমার ভার্টিগো অল্টিচুইড সমস্যা, তবে! সে কি এজন্মে
একবার অন্তত পাখিজন্ম পেতে চাইবে
রাইনের কাছাকাছি

[০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০]




অস্থির


চোখ জুড়ে আসে
ক্লান্তি--
আকাশ বলছে
অন্তিম

নিবিড় নীলিম
সত্য--
রাত জাগরণে
নির্ভার।

একঘেয়েমির
বৃষ্টি
কেউ বলে চলে
ফিসফিস

রেশ কেটে যায়
উষ্ণ
প্ৰস্রবণের 
উত্তাপ--

পথ খুঁজে নেয়
আর্তি
বাকি সবকিছু
অস্থির!

[জুন, ২০২০]




পৌঁছানো


যেতে গেলে শেষ পর্যন্ত হামাগুড়ি দিতে হবে।
আজকাল হাঁটু ভেঙে যায়।
পুরোনো বিকেলের মতো শরীর 
তাকিয়ে থাকে মিত্রাক্ষর আসঞ্জনে।

কালঞ্চ ফুলের ছায়া এখন নিমেষজুড়ে
শীতের উলে গরম সোয়েটার বুনে চলেছি।
তার জালের খোপে মৎস্যকন্যা ঝলসে যাচ্ছে।
এই লাল ফুলের রক্তে আমেজি
আচারের রোদ, তেল গড়িয়ে পড়ছে।
অথচ হাঁটতে গেলে হাঁটু ভেঙে আসে।

সিঁড়ি ভাঙি, কত উঠি কত পড়ি। অনুধ্যান।
শিরদাঁড়া নমনীয় হয়ে যেতে যেটুকু কঁকিয়ে উঠে
হামাগুড়ি দিতে থাকি...

[২৩ জানুয়ারি, ২০২০]




খমাজ আকাশ


খমাজ রঙে বিষণ্ন আকাশ
গা চুইয়ে ঝরে পড়ছে সন্নিবদ্ধ সন্ধ্যা।
অনসূয়া মুখ এলিয়ে দেখছে।
আকাশ না সন্ধ্যা তা তো তার
বোঝার কথা না।

তার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে 'ওসমান গণি'

দক্ষিণকোণে বাঁক নেয় একটা এরোপ্লেন
অনসূয়া খোঁজে পায়ের নূপুর

'কৌন গলি গয়ো শ্যাম...'
ডুকরে ওঠে মিশ্র খমাজ




যা বলার


একমাত্র নিজের মৃত্যুকামনার ভিতরে
সততা থাকে, যদিও আংশিক।
সম্পূর্ণ কিছু কি হয়?

ভেঙে টুকরো হয়ে যাওয়া
প্রতিটি অংশ সত্যি বলে, মিথ্যে বলে
নিজের নিজের মতো, মতান্তর।

মতান্তর মৌন হয়ে এলে ভাঙা টুকরো একত্রে 
স্বচ্ছ দাগহীন স্ফটিক প্রিসম,
রোদ ভেঙে রামধনু, শুরু করা যাক যা বলার

[৬ মার্চ, ২০২০]




যত্নের হাত


ঘুমের মাঝে শীত বেঁধে রেখেছিল তোমায়
রোদ এসে পড়লে চোখ কুঁচকে কেঁদে উঠলে।
যে গাছগুলো পাতা ঝরিয়ে একটু ন্যাড়া,
তাদের দেখতে দেখতে কতদিন বাদে যেন
ভূতে পাওয়া অন্য তুমি! 
তোমার আলাদা ঘর পরিচিতি
ঝাড়পোঁছ হয়নি অবহেলায়।  তুমি তার
মলিন ধুলোয় যত্নের হাত ছোঁয়ালে, একা।
পিঠের নগ্ন ঢাল তাতিয়ে বোহেমিয়ান রোদ্দুর...




চতুর্দশপদী


পেরিয়ে এলাম তবে দীর্ঘ দীর্ঘপথ
মুখের গঠন যেন প্রাচীন কাঠামো,
মুঠো ভরে ধরে রাখি কঠিন শপথ
নিরলস চেতনার আহরিত ধর্ম
দিয়ে গেছি তোমাকেই বুঝে সহনীয়।
বিরতি কর্মের বুঝি এইটুকু ঋণ,
আত্মজা নিপুণ রাখে দান গ্রহণীয়
স্নেহাশিস তাকে দিয়ে আমি দায়হীন।

অমৃত ঔরস বাজে সুরেলা ভৈরব
শিশিরের ভেজা পথে বিনীত আলাপ,
শারদীয়া ভোর। সাদা শিউলি বৈভব
ঢাকের কাঠির তালে নিহিত উত্তাপ।
কী যে দিতে পারি তাকে ইচ্ছের নিভৃতে
হৃদয়ে বিরাজ করে অভিলাষী স্রোতে।


অজয় দাশগুপ্ত কাব্যসংগ্রহের প্রুফ দেখতে 
দেখতে মনে হয়েছিল বাবা কি এরকম ভাবতেন? 

[জুলাই, ২০১৯]




বাবা


কথাদের কথা না বলতে দিয়ে কেটে গেল
তেরোবছর। যখন তুমি ছিলে
উচ্চারণ ঘিরে, কথা ছিল। মৈত্রীর কথা
তর্কের কথায় ছিল না অনুশাসন।
বাবা, তুমি কি একটু বেশি প্রশ্রয়ী ছিলে?

প্রথম কথা বলা : 'কে?' অবাক তুমি!
'মা' বলিনি, বলিনি 'বাবাও'।
দ্বিতীয়বার কড়া-নাড়ার শব্দ,
দরজা না খুলে আমাকেই দেখছ তুমি!
আবারও ছোট্ট আমি বলে উঠলাম : 'কে?'
আত্মহারা তুমি, মা। তোমার মুখে শোনা বড়ো হয়ে।

এখন হাবিজাবি তর্করা শব্দময়। কথারা
নগ্ন ঊর্ধ্বমুখী চুপচাপ!

তুমি কি শুনতে পাও বাবা?

[১৭ জুন, ২০২০]

খড়ের রাক্ষস 


এক


এলোমেলো অটবী ,
যার মনের  বিনিদ্রা ব্যাধি সুতসোম জাতকের দেশ থেকে ফিরে এসেছে | ঘুমের ঔষধের তীক্ষ্ণ ও জোরালো আলো সুড়ঙ্গের গহবরে দিশাহীন একঝাঁক সমুদ্র মরালের ঠোঁটে বয়ে আনে ঘুমের খাদ্য এক অর্ধ যাযাবরের জন্য | 

সে ভাবে কতকাল আমি ঘুমোই নি কবে থেকে তা আর মনে নেই ...

যতদূর পর্যন্ত মনে করতে পারে ঘুমের মধ্যেও তার জাগরণ , সুষুপ্তি কুহকে পূর্বগামী প্রকৃতির কাছে | পা থেকে মাথা পর্যন্ত জড়ানো , গর্ভিনী ভাবান্তর প্রত্যাশী সর্পমিথুন মাংসপর্ব পেটিকায় ,
ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যের মধ্যে তার এই অতীন্দ্রিয় অস্তিগ্রাহ্যরূপ ...

লুপ্ত অপ্সরার ডানার সঞ্চারকালে সর্বপেক্ষা বঞ্চিত  যারা , পুনরায় প্রবাহিত ফসলের কীটে ,
কীটের ক্ষুধা আর কামনায় 

সম্পাত বিন্দুর থেকে নেমে আসে অধোমুখ নক্ষত্রগুলোতে 

সে ভাবে , স্বাদ ও সংশয়ে | অঘোর  রমণীদের 
কথা 
অনিত্য আলাদা অল্প মৈথুন বা অরণ্যানী মাতা হয়তো পুনর্বার অন্য ছকে বদলে -- সাজিয়ে দিতে পারে ঘুমের দৃশ্যকে বাঁচিয়ে শেষ বল্মীক পোষাকে ...

অপমানিতের আত্মহনন .... বিকল্প এক হেমলক পাত্র ...
কতকাল রয়েছে মন ! 
প্রাচী অভিযাত্রী ভ্রুণ ধ্বংসকারী ঘোড়াদের উপদংশ বহনের পাপ আর নেই ,
নেই , ভুক্তভোগী ভিন্ন  শরণার্থী  কোনো কুকুর সৌরপরিবারে ...




দুই


মূর্ত হরিণ শিকার , যা বনের পরমান্ন ...

তোমার জন্য যাই নি অবলুপ্ত মূলদেশের দেহকান্ড ধরে 
কেমন সুন্দর ওই অকরুন ক্ষতে নিষাদযাপনের সাকিনা ...

জল প্রভূত নষ্ট হয়ে শেষ হওয়াগুলোকে শেষ করে 
কতো পরিখা পৃথিবীর মাঝ মধ্যিখানে প্রয়োজন 

ফোটায় গুটিকা গাঁয়ে হরিৎবনের হরবিলাস ...

তুমি এক শিকারী সকল ,
জলহীন মিহিজামের মেঘ আসছে আকাশে ,
বাল্যকালের রামগড় থেকে
 অলোকাপুরী টকিজে ছুটেছি  চারআন্নি নিয়ে  কুমার যক্ষের নটরাজ ভৈরবীর নেত্য দেখতে 

সারাংশময় ঘোড়াকে দামাল করেছে প্রাণের পণ্য 
একটুকরো খাদির চাঁদ মধ্যউত্থানের শেষে পুড়ে যায় 

আকাশের মনমরা বালিয়াড়ির ওপর 
ছুটির নরম রুটি , মিঠে শাঁস (ডাবের)
মুখে নিতে কি যে ভালো লাগে !




তিন


একটা আলাদা রকম গন্ধ আছে ফুলের ...

সমস্ত শব্দের গায়ে গায়ে গন্ধের সমবেত অন্তর্জলি 
দারুণ সব জলসত্র |  পুলকহেতু নিমিলিত সকালে শব্দ করে ঢালে গরম দুধের চা ,
গরম জল গলায়  খাঁকারি দিয়ে ঢালে ...

মন্বন্তর নয় , ডিহির অধিকার নিয়ে মজদুরবর্গ 
ঘন বন নদী আর  গোঠের অবসাদ কানাই ,
বাঁশির ঘূর্ণি -- লু ,
ডাল তেল নুন মোমবাতি কিনে 
গানের ছানাপোনা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে 
নীহারিকা ছবির মানুষ দুগ্ধফেননিভ শরীর খুলে ফেলছে 
আংরা হলে প্রকট পেশির নীচে লুকিয়ে 
কতো পরগাছা রাতের রঙ 
সীমান্তবর্তী এক বনপথ দু পাখির প্রণীত ...




চার


তুমি একা আঞ্চলিক , মনুষ্যবিহীন দেশে স্বনির্বাসিত ...

একটা মধ্যবর্তী বেণুগোপালবাবু ,
পায়ে এলেবেলে দিকক্রবাল 
আর বুকপকেটে শতছিন্ন কাগজ ওল্টানো ডটপেন 
সেই তোমাকেও পৃথিবীর রাস্তায় দেখা যায় !

বেড়ালটি সঙ্গী হয় কখনও সন্ধ্যায় 
এতো কাছে এসে পড়া  বনশ্রেণী , 
আমিষ কি নিরামিষ বাজার , হস্তরেখার ফুটপাত বই 
মেয়েটি চলেছে আগে আগে 
ঝটিকা মুগ্ধ আধা শহরের পথে ,
তোমার টুকরো টুকরো ছায়া নিয়ে হত্যার স্বাদ 
পূরণ হলো কি  নিশিবালা ?




পাঁচ


শেষ দৃশ্যের জন্য সূর্যাস্ত দেখতে পরপুরুষ চাই 

প্রতারক পাতক শরীর 
তাবৎ কামনা 
সৎ --চিৎ -- আনন্দ হয়ে 
দেখা হয় না দু ' আনা সোনার খাদে 
পরিধেয় পোকায় কাটা ...

ইন্ডিগো আকাশের মাঝ থেকে নেবুলার লম্বা ফালি 
মূলবিহীন সমস্ত উপাঙ্গ ছড়িয়ে 
বালতির জলে টলমল করছে ...

আলোকিত আক্রা বাজার 
বিপন্ন গুহায় জ্বলছে আগুন 
গুহার বাইরে উড়ছে ধুলোর মতো 
নিম সরস্বতী ....

শেষ দৃশ্যের আগে একটু স্নানের প্রয়োজন ...
স্নান শেষে ঊনষাট পাপকর্মে  অধমার্গে নেমে আসতে হলো 
এই  সারাক্ষণ সারাটা সময় 
শরীর থেকে মাংস ছিঁড়ে নিয়ে 
ক্ষুধা পাগলের জন্ম হয় ,
কাঁকিল্যা গ্রামের মাচায় পাথর --চাপা তুলোট কাগজে বন্দি শ্রীরাধার হাহাকার শুনে উড়ে আসে বাঙালী আত্মঘাতিনীর ফাঁসুড়ে শাড়ি ,
 মর্গের রাতচৌকিদার নবমীর কাঁচা জ্যোৎস্নায় 
মহাকাব্যের উপেক্ষিত প্রসূতিকে শেখায় সারিগান ...

লেখ্যভাষা ও চলিত অভিমানে চা ফুরোবার আগেই দেখলাম 
সেই সে মরা মালতী 
সন্ধ্যা বাজার থেকে হপ্তা বাজারে ঘুরে মরছে ,
বিদেহী আশানন্দে ,
পুনরায় বলাৎকারের জন্য ....


উষ্ণতা ও কম্পন বিষয়ক কবিতা 


একটি আলিঙ্গনের আয়ু আলিঙ্গন শেষ হওয়ার আগেই ফুরিয়ে যায়। 
কজনইবা জানে অর্গাজমে যোনি কেঁপে ক্রমে স্থির হয়ে আসে! 
তারচেয়ে একটা সফল সঙ্গমও স্বল্পায়ু ; —কেউ 
এতসব না ভেবেও ভেবে নেয় জীবন এক সংকলন কিংবা 
জীবনের কিছুই না-ফেলার সংকল্প নেয় হয়তো অনেকেই ; তারা 
সকলেই বিস্তর আসবাব আর পোশাক-আশাকের বহুলতা দিয়েই 
বানাতে চেয়েছে শান্তিনিকেতন —না বুঝেই যে, 
উষ্ণতা, প্রাণের কম্পন কোথা থেকে আসবে! 

যে পাহাড়েরা অনেক আগেই লাভা বের করেছিল বলে আজ 
চুপ করে গেছে —তাদেরও কৈফিয়ত নেওয়া যেতে পারে ; কৈফিয়ত 
দিক তারাও —যারা আজ বীর্যহীন, নেতিয়ে পড়া, জরাগ্রস্ত! 
আদতে কোন কোন শিরা উপশিরার ভিতর দিয়ে বয়ে আসা উষ্ণতা 
আমাদের আজও টানটান উন্মুখ করে তোলে? তারপর 
সেই পথ ও সুড়ঙ্গগুলি বন্ধ হয়ে যায় কেন —তা না ভেবেও 
আরো বহু বহুকাল এই গ্রহে কেটে যাবে আমাদের ; হয়তো 
অতি অল্পজনেই অর্গাজমে কেঁপে টের পায় —
যোনির কম্পনে থেকে গেছে মহাজাগতিক আলোড়নেরই স্মৃতি! 




বরফ বিষয়ে সিদ্ধান্ত 


হাজার হাজার বছর আগেও কি বরফ গলেনি? 
বরফ গলে যাওয়া বরাবরই খুব ভালো ব্যাপার। 
তোমার আমার মধ্যে জমে ওঠা বরফ যেন কতবার 
অলিখিত নিয়মের মতো কোনো মঙ্গলবার বিকেলের দিকে 
গলে গেছে ; তারপর পুনরায় তা জমিয়ে তুলেছি। 

চিরকালই কল্পনাশক্তি মানুষকে অন্ধ করে রেখেছে —যা নেই, 
সে তা-ই দেখতে চায় ...কেন যা দূরে কেবল সেইদিকে চেয়ে থাকে? 
আমি বরফের টুকরো হাতে নিয়ে দেখেছি —সে কেবলি নিচের দিকে 
                                গলে পড়তে থাকে।   

যখনই বুকে ব্যথা জমাট বাঁধতে থাকে —তোমাকে বলি —
এ নতুন কিছু নয় ; আবারও গলতে শুরু করবে... 
শুধু একটা মঙ্গলবারের অপেক্ষা। হাজার হাজার বছর ধরে 
এইসব দিনগুলোকে এভাবেই পরপর সাজিয়ে রাখা হয়েছে। 




কোথায় স্তব্ধ হয়ে আছে? 


নিঃসঙ্গ বরফ আর সানুদেশের সরলবর্গীয়দের মধ্যে 
যে কথোপকথন —তা স্তব্ধ জমাট হয়ে আছে কোথাও। 
আমরা এখনো গ্রানিট পাথরের কাছে যেতে পারিনি, এমনকি 
পৌঁছাতে পারিনি আরো সহজ সাদাসিধে —যারা 
অল্প সংবেদনে সাড়া দিয়ে ফেলে তাদের কাছেও। 
হিসেব করো অতশত বিপুলতার ভেতরে আমরা সত্যি হয়ে 
কোথায় আছি! — কীভাবেইবা যাবতীয় অর্থ অনর্থ 
বুঝবার দাবি করতে পারি! 
মনুষ্যরচিত কবিতা বড়জোর একটা ভাঙা ডানা, এক পলকা হাওয়া বা একচিলতে শূন্যতার মতো! 
ধরো, অগম জলের নিচে 
চাপা পড়া টুকরো পাথর — কত কত যারা অনাবিষ্কৃত ;
কত কত আকাশ যারা নীরব —আমরা ভেবে তার কূল পাব? 
ভাবি —নিঃসঙ্গ বরফ আর সানুদেশের সরলবর্গীয়দের মধ্যে 
কথোপকথন কোথাও দীর্ঘ জমাট কবিতার মতো 
                                                   স্তব্ধ হয়ে আছে।




এমনকি তোমার বুকের পাথরও 


পাথরের যা আছে, তা হল কিছু বলার ইচ্ছে 
কিন্তু কখনোই মুখ খোলেনা তারা। ঠান্ডা পাথর হাতে নিলেই 
টের পাবে —লক্ষ কোটি বছরের স্মৃতি সে অটুট রেখেছে অথচ 
এই সামান্য কামিনী ফুলের গন্ধ কেমন তা তারা বলতে পারেনা। 

যেমন বস্তু, যারা সর্বদাই নিজেকে চিহ্নিত করতে পারে কিংবা 
জানে নিজের স্থান নির্দিষ্ট করে ফেলতে! পাহাড়ের গা থেকে 
খসে পড়া চাঙড় খাদের দিকে নেমে যেতে থাকে —আমি যেন 
তার বাঁকা হাসি লক্ষ করি ; কিন্তু কেন কিছু বলেনা সে? 

কীভাবে তারা জমাট ও বোবা হয়ে গেল —আমরা এসে সেসব দেখিনি। 
কিংবা তাদের ভাষা যা আমাদের বাচাল ভঙ্গিমা ছাড়িয়ে বহুদূর চলে গেল! 
হয়তো তারাই নিবিড়তরভাবে বুঝেছিল রৌদ্র আর ঠান্ডার মহিমা! 
সব দেখেশুনে অভিমান হতে পারে তাদেরও যে, 
আমাদের সমূহ অর্থোদ্ধারের চেষ্টা কেবল সাময়িক —চিরায়ত কিছু নয়। 

পাথরে হাত দিলে আজও টের পাই — তার বলার ইচ্ছে জমাট হয়ে আছে ;
এমনকিছু, যা আমরা কখনো বলিনি ও শুনতে চাইনি। 



বিছানা 


এত স্বল্পায়তন বিছানায় আমাদের চলবে কীকরে? 
যতদিন যাচ্ছে আরো কমে আসছে আমাদের খেলার জায়গা। 
যখন কৌপিন পরে থাকতাম —সেদিনগুলো এত ছড়ানো ছিল যে 
সুখদুঃখের গোঁগানি খোলা প্রান্তরের হাওয়ায় গিয়ে মিশত আর 
আমাদের মিলন-দৃশ্য আকাশ থেকে সবকটা নক্ষত্রই দেখতে পেত। 
আরো ঘন আরো নিবিড় হয়ে আসা উপত্যকার দিকে 
দিন গড়িয়ে এল কীভাবে! 

এখন এই স্বল্পায়তন বিছানায় আমাদের খেলা দেখার কেউ নেই ;
আজ উদগ্রীব নাক্ষত্র দৃষ্টি বস্তুর পাহাড় পেরিয়ে পেরিয়ে 
এই কোটরে এসে পৌঁছয়না। 
যতদিন যাচ্ছে আরো শীতল হয়ে আসছে আমাদের 
                                             সংকীর্ণ বিছানা। 

ঠোঁট ভেজাবে চুমা


ফোনের এপারে কান্না ওপারেও। মাঝখানে ছোট 
নদী। ভেসেছে নৌকা। কাগজের। লেখা : 'ভালো থেকো ভালো রেখো...'
দু-তীরেই খাসা প্রসন্ন মুথাঘাস।পিঁড়ি পেতে ডাকে:  
এসোজন-বোসোজন--কান্নাটি ধুয়ে যায়। দু-আঁচলা আলো-ঢেউয়ে। গা ঘেঁষে তখন নদীচরে চখাচখি , কাদাখোঁচারাও  দঙ্গল বসিয়েছে ...

নদী ঢেউ আজ হলুদ মাখাবে গেরুয়ার ছোপ 
দিয়ে। গায়ে হলুদের তত্ত্ব পাঠাবে সুপারি গাছের সারি। তীরে তীরে যত পানের বরজ উড়ে আসে তাড়াতাড়ি--চখাচখি, সারি গান গেয়ে যায়

পাড়ে পাতা আছে দূর্বা বিছোনো মা'র হাতে ঢালা মাদুরে...। 'চলো ডুবি...'
'---কী যে লাভ হত দেবতাটি  হতে চেয়ে'

রোদ্দুর-প্রিয় প্রজাপতি ওড়ে কেয়াফুল ঘিরে ঘিরে 

চুমার আলোয় জ্যোৎস্না নামবে তিন প্রহরের তীরে




ভাই ছুটি 


ক-খানা তিল ! গুনব এবার। নির্ভীক । শুনব যা 
হয় তাই শুনিও।  নিশ্চুপ । তক্কেতক্কে থাকবও! 
ঝুঁঝকিবেলায়। নরম আলোর জাফরি...

দোয়েল ওড়া। উঠোন চৌকাঠে। নামল চরমক্ষণ।  মনখারাপের। শিলাইদহে। আলোয়-হাওয়ায়।যেন। ---ওই বর্ষার ষাঁড়াষাঁড়ির বান । হেলান দেওয়া                     

বিল-বোর্ড-এ কি দারুণ দারুণ বিজ্ঞাপনে...

গেল মাসের,তারিখ কত?জানিয়েছিলে।সঙ্গকাতর 
তরুণ-রবি লিখে গেছেন ? ছিন্ন পাতায়। কৃষ্ণচূড়া।লুকিয়ে ছড়ায়। পয়ার গুলাল। অন্ত্যমিলের
পিচকিরিতে ছুঁড়ছে আতর

'ভাই ছুটি'--কী, কিচ্ছু জানে...




পরিযায়ী-উড়ান 


রাত্রি শেষ! ভোর হল? সম্মোহন। ভুলে যাওয়া যায়

তোমার ঠোঁটেরআলো? হাতের রুটি। যে আলোয় পথচিনে, নোংরা-ফাটা, পাথরেকাটা--পায়ের তালু
হেঁটে আসছে সহস্রদিন-সহস্ররাত...

কাটা-মুন্ডু।  কোলে নাও মাথা। লীলাপদ্ম হাতে 

দাও, থরথর কম্পমান ---মৃত  মুখে তুলে দাও
ঢেউ...হে অনন্ত রেলপথ, ঝোড়ো রাত। হে উত্তাল  ফুটে ওঠা দুটি মউ ফুল ; ভুলে যাব--নাভি তিল ! 

তরঙ্গ আছড়ে পড়া--শরম নেবাল...

বলো তবে কেউ হও ! অন্য স্বদেশ। অন্য জন্ম, কেউ ? চাঁপা গন্ধে জ্বলে ওঠে আদরের আলো...
টেমি লন্ঠন--একমাত্র দরজা আমাদের 

---তুমি এর কিচ্ছু জানো না :

হাঁটু মোড়া, ধাক্কা দেওয়া..'জোরে'...অসহ্য কলরব
দু-ছত্রে লিখে রাখা যায় ? পরিযায়ী জন্ম দেওয়া,
রাজপথ। রেলপথে কে ছড়াল

উড়কি ধানের-খই...  বিচ্ছেদের  রাস উৎসব !




ডলপুতুল 


ডলপুতুল। কেড়ে নিয়ে।
বিশেডাকাত পাঁজাকোলা। এখন
 রাত-বারোটা ঠিক : 'মহিলা' হয়ে উঠছি মাগো! 
যন্ত্রণায় নীল কাতর। কনের সাজ যায় ধুয়ে।   কালশিটে দাগ-আঁচর-কামড় , তোমরা জাগো।
তোমরা ঘুমাও। ডাকব না আর...আকাশ তোমায় খাঁচার শরীর দেখাব না...আহত এই পাখির ডানা

ঘর পেয়েছে। পেয়েছে বর--গোদরেজের আলমারি
বন্দী থাকে রাইকিশোরী। সিঁথির সিঁদুর হাতের নোয়া। ফুটল চোখ। 'মহিলা' আজ।

তোমাকে ছাড়া পারছি না আর। আঃ! তোমাকে
ছাড়া-- দু-মুঠো ভাত। সন্ধ্যারাগেই সোহাগ-পানি।
নিজপুরুষ। ডিপ্রেশন ডিপ্রেশন। রাংতা খোলো।
ওষুধ চাই 

দেহাতি সেই বাংলা বুলি। সবই ভুলে যাচ্ছে পাখি।  দেহাতি সেই গাছপাড়া সব।চাইলে পাই মিষ্টি ফল।
এইতো আবার খুঁজে পাচ্ছি হারিয়ে যাওয়া চোখের জল...




ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট 


দু'দিনধরেই নিম্নচাপের গুঁড়িগুঁড়ি দুত্তেরিকা! গুড
মর্নিং ম্যাসেঞ্জারে। চিত্রসহ গুডনাইট। স্ক্রিনেই খোলা-পাওলি দাম--বক্ষজোড়া গুরুদেবের
                                    পূজারিনি--
মাত্রাবৃত্তে মজাক করে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট  : 'আমি চিনি গো চিনি তোমারে...'

সকালটুকু সামলেউঠে কাজেরধান্ধা ঘোড়াছোটাই

শরীরী সাঁঝবাতি যখন ?  একলা-একা বুক জ্বলে।
টিভিরস্ক্রিনে প্রিয়তমার হৃত্তিকের বইশুরু।বই পড়া
নয়-কোহলি নয়--বোতল খোলা মনকেমনের এ্যাল কোহল : স্ক্রিনটাচে হাত।ওদিক থেকে বাঘিনি ঝাঁপ

--'ঝেড়ে কাশো--বুড়োঢ্যামনা'




বাক্সবন্দি লাশ 
['আকাশ-পারে কিছুই কিগো বইল না--']


কত'শ ছাব্বিশ সাল আজ? বন্দি করে রেখে গেছে
দিন-প্রতিদিন ! দেখিনা দোয়েল-কোয়েল ওড়া পথ
ক্ষীণ সরু আলেয়ারস্রোত।বাঁহাতের শেষচিহ্ন রুলি
এয়োতীর। টবের অর্কিড ঝোলে বেড়াবিনুনিতে 

কে রেখেছে আইলাইনার ! কে আঁকে বাক্স-গায়ে দাগ নিয়মিত। নিয়তির আয়ু...বন্ধুজন হও তবে
শত্রু নয় কেন ? জন্মদিনে পাওয়া ডল--- হাসতে হাসতে বড়ো হয়ে গেছে দেবদারু। গুলির চিহ্ন

দাও বন্দি হারমোনিয়াম। দাও দাও বেরিয়ে আসুক কোমল ধৈবত :  'যেন তারা কার আশে...'




গন্ধর্বরীতি 


কুপির শিখা।
                  ঝলমল করছে
আমাদের 
             রাত্রিদাগ।
উজ্জ্বল হয়ে 
                     ওঠে লজ্জা 
         রাঙা পরির দু-ডানা

বল্গাহারা নাভিকূপ 
          ডুবে যাচ্ছে-- 
জলে 
ডোবা
সোনার বালতিটি

          শুয়ে থাক গান্ধর্ব-গভীরে




কোয়ারেন্টাইন -১


বৃষ্টির পর। সপসপে কালো পাইথন। মাত্রাবৃত্তে
পড়ে আছে পথ। গুনে গুনে হাঁটি। কতদিন দূরের সওয়ার...

কে ডাকে পথে পথে ? গৃহত্যাগী জোছনার রথ...

এ গ্রহের গ্রন্থ ছিঁড়ে চলে যায় কারা ?  কত
পাতা?  শ্মশান বন্ধুরা... বলো, কি কাজ বকুল জানে  ঝরে পড়া ছাড়া  :

'নক্ষত্রপল্লীর নীচে বাঁধি ঘর... চলো'

দক্ষিনের আকাশে আজ যূথবদ্ধ সেনা। দরিদ্র, রত্নেরকুঠুরি ছেড়ে তবু আসবেনা।
'পুণ্যিপুকুরে কেউ জল সরে?'

সবুজে ঢেকেছে সাঁচিশাক।  লাদাখের ঘন সে চাদর , ছুঁড়ে ফেলা ভাঙা শাঁখা খাবে

'সবপাখি ঘরে ফেরে, সব নদী--কে কোথায় যাবে!'




একটি ব্যালাড বা ব্লুজ


রুমাল হারিয়ে গেছে। গন্ধমাখা প্রিয় পারফিউম 
ভেসে আসছে:প্রাচীন ব্যালাড।গ্রাম্য ব্লুজ। অন্তরায় গিয়েও ফিরে ফিরে সঞ্চারীতে অলিগুঞ্জরন..

'চুপ করো , ঠোঁটে ঠোঁট দাও'

শুষে নিই।ঠোঁটের জড়ুল। ভুল করো।পাতা ওল্টাও
বালিশ নিয়েছে শুষে ভালোবাসা ঘাম
 'মনে আসছে সাতপাক!' রোদ তত গাঢ় হয়নিকো

হিজ হিজ, হুজ হুজ...

ভেসে আসছে আড়বাঁশি। মুরারির মতো লিঙ্গটান




তোমার তাতার 
['পাখি বাসা বাঁধে লতায়-পাতায়, তুমি বাঁধ প্রেম টবে টবে'--হোমার।]


ছিল বকুল-কিঞ্জল টিপ। ভ্রূসন্ধিতে। জংলা জমি পেরিয়ে কৈশোরের স্কুল-চালা। সূর্যাস্তের কুঁচফল
কুড়িয়ে ফিরতে। লাল-কালো ভালোবাসায় ভরে
উঠত কোঁচড় তোমার।ডান হাতে হলুদ জল লজ্জ্বা 

বতী-সাদা কেশরদাম-গোলাপি রাংচিতার বীজ। মুখে বিড়বিড়---হোমারের পঙক্তি  ভালোবাসা। তৎসম-গন্ধে ভরে উঠত সারা শরীর।পোড়ামাটির টব। আমারও। ভুলেই যেতাম তাতার-দস্যু

হওয়ার শখ। তুমি চলে যেতে মাগধী প্রাকৃত থেকে 
দুশোবছর দূরে। ঝুঁকে কথা বলতে , টবের সঙ্গে-- সদ্যোজাত গাছের ভাষায় জলঝারি আগিয়ে দিতাম। আনমনা ঝরে ঝরে পড়ত রংতামাশার 
বিন্দুবারি...

মেঘ ও শ্রীমতী চুম্বন 


১.

আমি তো পরাগে তাকে ঢালি
তাকে আমি ঢালি খোলা মদে
কত পাখ্ কত যে পাখালি
উড়ে আসে সোনার গারদে 

একটি নধর আলো আসে
আসে এক বিকেল-বালিকা
বালিকা আমায় ভালোবাসে
তবু আমি চিরকাল একা

চিৎকারে জল ঢুকে গেছে
পেটে ভাঙে খিদের বানান
সেটা কেউ বুঝতে পেরেছে?
ছুটে গেছে সব পিছুটান 

যদি বলি, তোমারই ছিলাম 
তুমি তবু আমার হলে না
আমাদের কোনও ডাকনাম 
কেউ আর মনে রাখবে না... 


২.

আঙুলে আঙুল রাখো হাত ধরো দু'জনাই বাঁচি
যে সময়টা বয়ে গেছে তাকে আর কী করে ফেরাব?
কী নিয়ে এসেছে কেউ? কতটুকু নিয়ে যাবে যখন যাওয়ার?
নিজেদের মেরে ধরে কাদা ছুড়ে কতটুকু পাব?
আসলে যে আমাদের ছোট-বড় ক্ষতগুলো এক
শুধুই নিজের করে নিজেরটা বুঝতে শিখেছি 
কেউ কারও দিকে চেয়ে দেখিনি তো কতখানি ফাঁকা
তুমিও বুঝেছ ভুল, আমিও তো চিরকাল ভুল বুঝে গেছি
হিংসা বিবাদ রাগ যার থাকে তাকেই পোড়ায়
তুমি কি পুড়েছ কম? আমারও কি এ বিবাদে কম  হল পোড়া?
এইভাবে সকলেই প্রতিদিন একা হয়ে গেছি
আমাদের হৃদয়টা মুখোমুখি বড় ভাঙাচোরা 
এসো, এ বিপদে শুধু আমরা শরিক, কেউ নেই কাছাকাছি 
আঙুলে আঙুল রাখো, হাত ধরো, দু'জনাই বাঁচি...


৩.

তুমি যাকে এতদিন ধরে শুধু ভালোবেসে গেছ
আর সে তোমার সেই ভালোবাসা গ্রহণ করেনি
অথচ হঠাৎ তার নতুন প্রেমের কথা বুঝে
তাকে কি করবে ঘৃণা? তাকে ভালোবাসা ছেড়ে দেবে?
বরং নিজেই তুমি সরে যাও, থাকো দূরে দূরে
পারলে মুছেই নিয়ো নাহয় নিজেকে পুরোপুরি 
তারা সুখে থাক তারা ভালো থাক-- এটুকু তো চাওয়া!
এ চাওয়ার থেকে বড় আর কোনও সত্য আছে কি?
জীবনের থেকে আর এর বেশি পাওয়ার থাকে না 
জীবন তো ঝরাপাতা-- একদিন খসে পড়ে যায়
তোমার থেকেও বড় প্রেমিক কি আর কেউ আছে!
সব প্রেম পরিণতি পাবে বলে কোনও কথা নেই
অতএব এইটুকু জেনে রাখো, ভালোবাসো যাকে
সে তোমার সবকিছু তুমি তার কিছুই ছিলে না...


৪.

চলো, তবে এই দিনটার আরও কাছে
আরেকটু হেসে মাথা নত করে রাখো
দিনটাকে বলো, এখনই যাবে কি চলে?
দিনটাকে বলো, আরেকটু কাছে থাকো!

প্রতিদিন, রোজ... কত দিন চলে যায়
কত কত ধুলো জমে যায় ডাকনামে
সেই নাম ধরে কেউ তো ডাকে না আর
যে কোনও সফল কর্ম যে নিষ্কামে!

বলা তো হয়নি কিছুই হয় না বলা
আরও কত কত না-বলারা যাবে থেকে
কোনও কোনও কথা খোলা যায় পুরোপুরি 
আর কিছু কিছু রেখে দিতে হয় ঢেকে

চলো, তবে আজ এইবারে এই বেলা
এই দিনটাকে দু'হাতে আঁকড়ে নিয়ে
চোখে চোখ রেখে সোজাসুজি বলা ভালো
বলে দিতে চাই পুরোটা তোমাকে গিয়ে--

বলা তো হয়নি এভাবে কখনও আগে
তোমাকে দেখলে মায়ের মতোই লাগে...


৫.

বেদনার প্রতিটি দিশায় খুলে থাকে নিয়তির হাওয়া
তোমার...
কাছে এসে দূরে চলে যাওয়া
আমার স্মৃতিও তবে একদিন পুরোনো হবেই?

মনে হয়,
তোমাকে ভোলার মতো আর কোনও সমাধান নেই


৬.

তুমি যে মেসেজগুলো লিখে লিখে ডিলিট করেছ 
আর যে মেসেজগুলো টাইপ করেই দাও মুছে 
কখনও বলিনি আগে-- জেনে রেখো, সেগুলোই আমি

তুমি যে কান্নাগুলো কোনোদিন দেখাতে পারোনি
তুমি যে রান্নাগুলো মনেমনে আমাকে খাওয়াও
বুঝতে পারোনি কিছু-- জেনে রেখো সেগুলোই আমি

যে গান তোমার ঠোঁটে গুনগুন বেজে বেজে ওঠে 
যে গান আমার কথা ভেবে নিয়ে তোমাকে বাজায়
হয়ত বোঝোনি আজও-- জেনে রেখো, সেগুলোই আমি

তুমি যে রাস্তা দিয়ে রোজ রোজ হেঁটে চলে যাও
তুমি যে পথের বাঁকে থমকে দাঁড়াও প্রতিদিন 
কখনও পাওনি টের-- জেনে রেখো, সেগুলোই আমি

যেসব ক্লান্তি-মায়া ঘরে ফিরে মুছতে চেয়েছ
যেসব শান্তিগুলো তোমার আরামটুকু জানে
তুমি তো জানো না কিছু-- জেনে রেখো, সেগুলোই আমি

তুমি যাকে ভালোবাসো তবু সেটা মানতে চাও না
ডায়াল করেও যাকে... ফোন কেটে দাও বারবার
তারা আর কেউ নয়-- জেনে রেখো, তারা সব আমি

তোমাকে যে চুপিচুপি রোজ রোজ ছুঁয়ে চলে যায়
যে তোমার অনুভূতি না-জানিয়ে আগলে রেখেছে
বুঝতে চাওনি তাকে-- জেনে রেখো, সেটা শুধু আমি

যে সব কবিতাগুলো তুমি কিছু বুঝতে পারো না
আর যে কবিতাগুলো তোমার ভেতরে বয়ে যায়
নিজেকে প্রশ্ন করো-- জেনে যাবে, সেগুলোই আমি

তোমার শহর ছেড়ে তুমি যাকে চলে যেতে বলো
একবার চলে গেলে যে মানুষ ফিরতে পারে না
এটাও বলতে হবে? আর কেউ নয়, সেটা আমি?

যে প্রেমিক মরে যেতে যেতে রোজ তোমাকে বাঁচায়
যে প্রেমিক হাসিমুখে তোমার তিরস্কারে মরে
সে লাশের কাছে ঝুঁকে চেয়ে দেখো-- শুয়ে আছি আমি


৭.

যে পাখি আমাকে ছেড়ে উড়ে চলে গেছে বহু দূরে 
রঙিন দু-চোখ তার পরে আছি যেকোনো রোদ্দুরে 
ও বন্ধু তোমার কাছে আজীবন থেকে যাবে ঋণ
তুমি কি আমাকে ভাবো? আমি ভাবি আজও প্রতিদিন--
কতটা ধোঁয়ায় কত গ্লাসে গ্লাসে জীবন কাবার 
কত হাসাহাসি কত অভিমান তোমার-আমার
দূরে সরে থাকা তবু ভালো জানি স্মৃতিতে সময় 
আরও দ্রুত কেটে যাবে যেভাবে কাটার মতো হয়
কত যে শাসন কত কারণে বারণে মাখামাখি 
আমাকে একাকী রেখে দূরে উড়ে যায় সব পাখি
ফুল যে ফোটায় সেই গাছ তার খবর রাখে না
অথচ মাটির কাছে শিকড়টা কতখানি চেনা 
শিকড় উপড়ে গেছে স্মৃতিও খসেছে ঝুরোঝুরো 
দু-জনে আমরা আধাআধি আজ কেউ নই পুরো 


৮.

জানি না, কেন যে এত চুপ হয়ে থাকা
জানি না, কীসের এত কেন যে অভিমান

বোঝাতে পারিনি আমি, বোঝানো যাবে না 
বারেবারে হেরে যাওয়া জেতার সমান...


৯.

দেখাটুকু হওয়া না-হওয়ায়
তুমি-আমি
পুড়ে গেছি দূরত্বের আঁচে...


১০.

তুমি কি আমাকে চাও? চেয়েছ কখনও কোনোদিন? 
আমি যে তোমাকে শুধু চেয়ে গেছি বিনা প্রতিদানে
নাহলে দাঁড়াব কেন একটা ঝলক দেখে নিতে!
নাহলে কেন যে সারাদিন ধরে অপেক্ষায় আছি!
নাহলে কবিতা কেন লেখা হবে এভাবে এতটা! 
নাহলে কেন যে ফোন করে ফেলি বারণ তবুও!
বিষাদে বসত করে এতখানি ক্ষয়ে ক্ষয়ে গেছি
দু'হাতের থেকে সব আয়ুরেখা উড়ে চলে যায়

তোমার শহর ছেড়ে দূরে আছি, ছাড়িনি তোমাকে 
যে কোনও স্পর্শে আমি তোমাকেই ছুঁয়ে আছি, দেখো
আমি যাকে ভালোবাসি তাকে ছেড়ে যাইনি কখনও 
চলে যাওয়া মানে সে তো মৃত্যুতে চিরতরে যাওয়া
তাহলে সেটাই চাও? চলে যেতে দেবে সম্মতি?
একবার মরে গেলে কোনোদিন ফেরাই হবে না...


অনুসরণ করো তোমার স্বপ্নকে


অন্ধকারের ছায়ায় বসে একটি ছোটো মেয়ে
আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল:
ঈশ্বর, কখন আমি জানতে পারবো 
আমার জীবনের সঠিক পথ?
 ঈশ্বর হাসলেন এবং মেয়ের দিকে 
তাকিয়ে বললেন:
কিছু এসে যায় না কোন পথ
 তুমি বেছে নিলে জীবনে,
আমিতো সর্বদাই তোমার পাশে।




কবিতা আমার কোটকে 


জীর্ণ কোট, শোন
যখন আমরা আরো এগিয়ে যাচ্ছি 

এই কবিতা তোমার জন্য 
তোমার লাইনিং-এ এটা আটকে দেব 

আমরা হয়তো আরো কিছু দিন কাটাবো একসঙ্গে 
সব রকম হাওয়া বাতাসে 

আর উপভোগ করব এই ভ্রমণ ...




পৃথিবী


পৃথিবী 
রক্ষা করো সূচনাগুলিকে 

জগৎ
 সজাগ হও উচ্চারণের প্রতি 

জগৎ
পৃথিবীর প্রতি সজাগ হও উচ্চারণের প্রতি

 জগৎ
পৃথিবীর প্রতি  হও কৃতজ্ঞ

 পৃথিবী 
নমস্কার করে জগৎকে 




উঁচু নীল দিন


ভাবনার  শীর্ষ এই, আর 
কোনো শিল্পই  একে ছুঁতে পারে না,
  নীল, এত নীল,দূরবর্তী দ্বীপ
 আর সমুদ্র, গর্জনরত 

কোনো শিল্পই একে ছুঁতে পারে না, মনই  কেবল
চেষ্টা করে সুরবদ্ধ হতে, 
 উন্মুক্ত  ও শান্ত হতে 
জগৎহীন নিজেকে সে জানে
হীরকের দেশে
অন্তিম নিরক্ষর আলোয়।




সাদা বন


 তাই  বইপত্র, ঠেলে রেখেছি দূরে 
এবং দেখে নিচ্ছি তুষারমাখা গাছ 
থেকে পড়া শেষ আপেলগুলো 

...এবং হঠাৎ 
হঠাৎই জানতে পারি আমি ছিলাম সর্বদা
 এই সাদা বনের ভেতর 
বইপত্রের আগে 
এবং এই বইপত্রের পরেও থেকে যাবে 
এই তুষার-আবৃত বন

এবং আমার হৃদপিণ্ড জুড়ে শূন্যতা থাকবে 
এবং মস্তিষ্ক খোলা থাকবে বাতাসের দিকে




একটি বাঁকানো পাইনের ব্যাখ্যা 


অ.

আমি হাঁটতে শুরু করলাম 
বড়ো হয়ে 
যেমন সবাই করে ।


আ.

তারপর আমি নিলাম 
দক্ষিণে একটু  বাঁক
পুবে ঝুঁকে 
একটু দীর্ঘ উত্তরে
তারপর হঠাৎ  মোচড় পশ্চিমে ।


ই.

এখন আমার কাছে অগ্রসরমানতা
অদ্ভূত কিছুর জন্য প্রস্তুতি

আমার দর্শনে পাইন ছাড়াও কিছু আছে ।


ঈ.

হ‍্যাঁ, আমি একটা পাইনের চেয়ে বেশি কিছু 
আমি একটা মহাজাগতিক চিহ্ন ।


উ.

আমি বাগধারা সম্মত
আমি অদ্ভুত ব‍্যাক্তিস্বত 
আমি সক্রেটিসেরও আগে।


ঊ.

আমি হতেও পারি চিনা 
লি পো, তু ফু
এবং মাননীয় টুয়াং সু-র মতো।


ঋ.

আমি শান্তভাবে থাকি 
তবুও আসে ঝড় 
আমি নাচি দার্শনিক নাচ 
অস্তিত্বের হৃদয়ে ।


এ.

আমার মস্তিষ্কের সাহসী শাখাগুলো
সূর্যালোক বৃষ্টিতে সজীব।

আমার বুনো মন
বাতাসের  সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।


ঐ.

অই, দেখো পাগল পাইন
স্পর্শ করেছে আকাশের নীলিমা।



কেনেথ  হোয়াইট ও  তাঁর  কবিতা 


স্কটিশ কবি, পণ্ডিত ও লেখক কেনেথ হোয়াইট (Keneath White, 1936) -এর জন্ম ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের ২৮ এপ্রিল স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোর  গরবালস এলাকায়। তাঁর বাবা ছিলেন রেলওয়ের চাকরির সঙ্গে যুক্ত।  এই সূত্রে কেনেথের শৈশব ও কৈশোর কাটে আইরসার উপকূলে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হোয়াইট ফরাসি ও জার্মান ভাষা-সাহিত্যে ডিগ্রি লাভ করেন। ইংরেজি ও ফরাসি দুই ভাষাতেই কেনেথ মৌলিক কবিতা লিখেছেন। তবে ফরাসি সাহিত্যেই  তিনি অধিকতর খ‍্যাতি পেয়েছেন। তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ : 'দ‍্য কোল্ড উইন্ড অব ডন' (১৯৬৬) , 'দ‍্য মোস্ট ডিফিকাল্ট এরিয়া'(১৯৬৮), 'দ‍্য বার্ড পাথ' (১৯৮৯),  লে রিভে দু সাইলঁস।

কেনেথ হোয়াইটের কবিতায় মানুষ ও প্রকৃতির গভীর সম্পর্কের কথা আছে। প্রকৃতিবিমুখীন আধুনিকতাকে কেনেথ বর্জন করেছেন । প্রকৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত যে মানব জীবন তাকেই কেনেথ ধারণ করেছেন তাঁর কবিতা ও চিন্তা-চেতনায়। তাঁর 'অন দি আটলান্টিক এজ'  গ্রন্থে মানুষ ও প্রকৃতি এবং প্রকৃতি ও কবিতার নিবিড় সম্পর্কের কথা বলতে চেয়েছেন ও ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন কেনেথ।ভূ- কবিতাতত্ত্ব বা জিওপোয়েটিক্স ধারণার অগ্রদূত কেনেথ হোয়াইট । আধুনিকতায় প্রকৃতির স্থান পরিধিক।  কিন্তু আজকের চিন্তা-চেতনায় প্রকৃতির অবস্থান আবার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ।


অনুবাদ ও পরিচায়ন : রুদ্র কিংশুক


কৌটোর ভেতর থেকে উঁকি দিয়ে


এখন কৌটোর ভেতরে লুকিয়ে রাখছি নিজেকে। হীরের নাকছাবি যেন।একটু পরপর কৌটোর মুখ খুলে দেখছি ঠিকঠাক আছি কিনা। তোমার মরালগ্রীবা থেকেও এখন সরে যাচ্ছে আমার চোখ; ভয়ে, অপ্রেমে। এখন পত্রমোচী গাছের পাতার মতো ঝরে পড়ছে সম্পর্কের চুম্বকাবেশ। তোমাকে মনে হচ্ছে এক ছদ্মবেশী আমাজনি।
দূরে থাকো, দূরে থাকো! ছুঁয়ো না, ছুঁয়ো না!

কোথাও যুদ্ধ হচ্ছে।নির্দামামা-নিরায়ুধ। কিন্তু কোনো রক্ত ঝরছে না। কেউ সাইরেন বাজাচ্ছে না, কেউ তাক করছে না কালাশনিকভ। তবু প্রত্যেক ঘরের কোণে কোণে কুরুক্ষেত্র। কশেরুকা আর মগজের ভেতর আততায়ী ঘুরছে; তাকে দেখা যাচ্ছে না ; কিন্তু তার ভয়ে জারকাঁটা দিচ্ছে সারা গায়ে। কেননা সে নেই তবু আছে।

'নাই-আর-আছি'র মাঝখানেই তার রুদ্রপ্রতাপ। যা মহামহিম সেকান্দর আর নেবুশাদনেজারের সম্মিলিত প্রতাপের অধিক। কেউ দেখতে পাচ্ছে না তার চেহারা, তার চাকু, তার রণরক্তেভেজা কৌপীন।

আমাদের হাসির ভেতর, আমাদের গোলাপের ভেতর আলগোছে সে মিশিয়ে দিচ্ছে তার কালকূট; আমাদের রক্তে, কার্পাসের ভেতর তার আবছায়া তার ছায়া। তাতে থুবড়ে পড়ছে আমাদের গান আর কলরব।

কৌটোর ভেতর থেকে গলা বাড়িয়ে পরস্পরের নাম ধরে ডেকে উঠবার আগেই সেই অদৃশ্য, কদমছাঁট-আততায়ীর ক্রূর হাসির নিচে ঝরে পড়ছি আমরা।

পত্রমোচী গাছের পাতার মতো
অন্তিম চুম্বনহীন
অবজ্ঞাত
একা
আর নিঃসহায় !




ইতিহাসের বই


এক হাতে ফুল ও মরিচা
অন্য হাতে মৃত কৃকলাস ;

তোমার দুয়ারে রোজ ছায়া হয়ে, উবু হয়ে আসি।

নদীর খাঁড়ির কাছে দলছুট বসে
কয়েকটি শিশুমেঘ, পরিশ্রান্ত-ক্ষীণতনু মেঘ
নিজেদের নাট-বল্টু খোলে আর জোড়া দিয়ে চলে।

হাই তোলে। ঘড়ি দ্যাখে। হোসপাইপে হালকা মরিচা
ঘষে ঘষে তুলে ফেলে তারা ;

আর একটু দূরে বসে
একটি কিশোরী-মেঘ ভাইটির জামা
ধীরে ধীরে রিফু করে ভাসমান সেলাই মেশিনে।

অপলক চোখ মেলে
শান্ত হয়ে দ্যাখে গোল চাঁদ !

ধীরগামী, স্বচ্ছতোয়া এইসব নদীর কিনারে
কোলে নিয়ে মৃত কৃকলাস
সপ্তপর্ণ গাছ বেয়ে একা আমি,
দমে দমে উঠব শিখরে। তবু যদি
রেখে আসা যায় ওকে, চুপে,
শূন্যে শয্যা পেতে হাওয়ার রোদনে।

খাঁড়ির আড়ালে বসে এভাবেই
ওয়ারেন হেস্টিংসের আমলের মদ তুমি পেয়ে যাবে
ইতিহাস-বইয়ের পাতায়।




দশ পায়ে নাচি


সামনে খুঁজি তাকে, পেছনে তাকাই
ঘুমের পোশাক গায়ে, দশ পায়ে নাচি

কোথায় সে? যখন সূর্য-পূজারির ঘরে
জ্বলে উঠছে উপমা, আগুন?

ঘোড়া ফেলে দিচ্ছে আমাকে আর তার জিন;
তবু বাতাস এক ঘোড়া।
সে ছুটছে আমাকে নিয়ে!

রাত্রির উপসংহার এলিয়ে পড়ছে মোরগঝুঁটিতে
তার শিরদাঁড়া বেয়ে নামছে রক্তঘন চিৎকারের নদী
তখন কোথায় সে ?
কোন গাঢ় কুয়োর অতলে তার শব ?

নেকাবঢাকা কোন শরবনে গিয়ে তাকে খুঁজি !

পথের ক্লান্তিহেতু গ’লে যাচ্ছে খুর
আমার ঘোড়ার ;

আমার হৃদয় আজ ঝুলছে অনেক ডালে ডালে

ঘুম পালিয়ে যাচ্ছে এক জানালা থেকে
আরেক জানালায়

ঘোড়া ফেলে দিচ্ছে আমাকে আর তার জিন
—এক চিৎকারের নদী থেকে আরেক চিৎকারের নদীতে!




আততায়ী


আমি জানি, আমার প্রস্থানপথ হয়ে থাকবে
শয়তানের পুরীষে আবিল !

স্বপ্নের ভেতরে গিয়ে জিরোবার ছল করে ডাকলে তোমাকে
কান দু’টি ভরে উঠবে প্রতিধ্বনিময় কা-কা রবে ;

অথবা, আমার স্বর শুষে নেবে খর মরুবালি ;

ঘুমের অশক্ত ডাল ভেঙে যাবে
চোখ দুটি খসে পড়বে নগরের নর্দমার পাঁকে

আমাকে ঘুমন্ত দেখে কালো দাঁড়কাক
অবসিডিয়ান নাইফের মতো তার ঠোঁটজোড়া নিয়ে
আমার মুখের দিকে ঝুঁকে র’বে, চেয়ে র’বে চুপ ;

---সারারাত বসে থাকবে শান্ত হয়ে বুকের ওপরে।
আমি এর কিছু জানবো না।




নোঙ্গরের পাশে


নোঙ্গরের পাশে তুমি, মনে হলো, ফেলেছ নোঙ্গর

সূর্য থেকে দূরতম পশ্চিমের এলানো বিকেলে;

বিষণ্ন ও একা ছিলে
ডুবন্ত জাহাজ থেকে জেগে ওঠা বুদ্বুদের মতো

রাত্রি এখানে তবে, অগোচরে, হয়েছে গোচর?
Subscribe to: Posts ( Atom )

LATEST POSTS

  • সাক্ষাৎকার : কথাসাহিত্যিক তমাল বন্দ্যোপাধ্যায় • কথোপকথনে সোহম চক্রবর্তী
    প্রাক্ সম্ভাষণ সমকালীন বাংলা সাহিত্যের দিকনির্দেশক একজন কথাকার তমাল বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রতিটি লেখাতেই কথা বলে একেবারে স্বতন্ত্র ও...
  • অপ্রকাশিত কবিতাগুচ্ছ - বিমান মাহাতো
    ভোট কষ্ট করে একটা কথা ছাপাও তোমরা, একটু খোলো ছদ্মবেশ। হাজার হাজার প্রহর কাটে অসুখী আর আমাদের সব প্রতীক্ষা শেষ। শেষ হয় না জীবন, ...
  • কবিতা : শীর্ষা
    নদী নদীর কথা ভাবলেই আমার চোখে তোমার গালের শিরাটা ফুটে ওঠে কী অসম্ভব বাঁশির মোহন কী অসম্ভব বয়ে যাওয়া ! ফুলেল স্রোতে টালমা...
  • কবিতা : সোহম চক্রবর্তী
    আমি নয়, আমার কবিতা যা-কিছু অসম্ভব, তা-ই আমি কবিতায় লিখি আমি না-হ’লেও আমার কবিতা বাজারে যায়, বন্ধুবান্ধব নিয়ে হাসিঠাট্টা করে, পু...
  • কবিতা : বেণীমাধব ঘোষ
    স্টিমুলাস            এসো এই মৃত্যূপুরীতে দাঁড়িয়ে আমরা আলিঙ্গনাবদ্ধ হই ঠোঁটে ঠোঁট, হালকা আবেশে বুজে আসা চোখ তিন গজ দূর থেকে...
  • কবিতা : রণজিৎ অধিকারী
    উষ্ণতা ও কম্পন বিষয়ক কবিতা   একটি আলিঙ্গনের আয়ু আলিঙ্গন শেষ হওয়ার আগেই ফুরিয়ে যায়।  কজনইবা জানে অর্গাজমে যোনি কেঁপে ক্রমে স্থি...
  • কবিতা : জয়ীতা ব্যানার্জী
    তিন পঙক্তির কবিতাগুচ্ছ                   অশ্রু এত স্বচ্ছ, নিরুত্তাপ। তবু কেন ক্রোধ বেঁধে রাখো কৃষ্ণনামে আলো দাও স...
  • কবিতা : চন্দ্রনাথ শেঠ
    ঠোঁট ভেজাবে চুমা ফোনের এপারে কান্না ওপারেও। মাঝখানে ছোট  নদী। ভেসেছে নৌকা। কাগজের। লেখা : 'ভালো থেকো ভালো রেখো...' ...
  • কবিতা : গৌরব চক্রবর্তী
    মেঘ ও শ্রীমতী চুম্বন  ১. আমি তো পরাগে তাকে ঢালি তাকে আমি ঢালি খোলা মদে কত পাখ্ কত যে পাখালি উড়ে আসে সোনার গারদে  এক...
  • শম্ভু রক্ষিত স্মরণে : চন্দ্রদীপা সেনশর্মা
    আ জ সকাল কবি শম্ভু রক্ষিতের মৃত্যুর খবর নিয়ে এলো। তিনি অসুস্থ ছিলেন বেশ কয়েকবছর। তাঁর মৃত্যুর প্রস্তুতি কমবেশি আমাদের ভিতর গড়ে উঠেছ...

Categories

  • অচিন্ত্য মাজী
  • অনিন্দ্য রায়
  • অনিমেষ মণ্ডল
  • অপাংশু দেবনাথ
  • অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়
  • অমিতাভ দাস
  • অমৃতাভ দে
  • অরিত্র চ্যাটার্জি
  • অরিত্র সোম
  • অরিনিন্দম মুখোপাধ্যায়
  • অরুণ পাঠক
  • অলোক বিশ্বাস
  • আবুল হাশিম
  • আলিহান্দ্রা পিজারনিক
  • উজ্জ্বল ঘোষ
  • উদয়ার্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়
  • উমাপদ কর
  • কেনেথ হোয়াটস
  • কৌশিক চক্রবর্তী
  • গৌতম মণ্ডল
  • গৌতম সাহা
  • গৌরব চক্রবর্তী
  • চন্দ্রদীপা সেনশর্মা
  • চন্দ্রনাথ শেঠ
  • জয়ীতা ব্যানার্জী
  • জুয়েল মাজহার
  • তিতাস বন্দ্যোপাধ্যায়
  • তৃণা চক্রবর্তী
  • দিমিত্রিস লিয়াকস
  • দিশারী মুখোপাধ্যায়
  • দীপক রায়
  • দেবজ্যোতি রায়
  • দেবদাস আচার্য
  • দেবাশিস চন্দ
  • দেবাশিস সাহা
  • নাফিস আনোয়ার
  • পঙ্কজ চক্রবর্তী
  • পঙ্কজকুমার বড়াল
  • পার্থজিৎ চন্দ
  • পার্থপ্রতিম মজুমদার
  • পিন্টু পাল
  • পিয়াস মজিদ
  • প্রজিত জানা
  • প্রতাপ মুখোপাধ্যায়
  • প্রতাপ হালদার
  • প্রদীপ চক্রবর্তী
  • প্রদীপ সিংহ
  • প্রশান্ত মাজী
  • প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী
  • প্রিয়াঞ্জলি দেবনাথ
  • বঙ্কিম কুমার বর্মণ
  • বিজয় সিংহ
  • বিধান সাহা
  • বিপাশা ভট্টাচার্য
  • বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়
  • বিমান মাহাতো
  • বিশ্বজিৎ দাস
  • বিশ্বজিৎ মাহাত
  • বেণীমাধব ঘোষ
  • মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া
  • মনোজ দে
  • মলয় গোস্বামী
  • মহুয়া বৈদ্য
  • মারুফ আহমেদ নয়ন
  • মৌমিতা পাল
  • যুগান্তর মিত্র
  • রজতকান্তি সিংহচৌধুরী
  • রঞ্জন ভট্টাচার্য
  • রঞ্জন মৈত্র
  • রণজিৎ অধিকারী
  • রাজীব পাল
  • রাশেদুন্নবী সবুজ
  • রিমি দে
  • রুদ্র কিংশুক
  • শান্তনু দাস
  • শীর্ষা
  • শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী
  • শুভাশিস মণ্ডল
  • সঞ্চারী ভৌমিক
  • সঞ্জয় সাহা
  • সন্তু কর
  • সমরেশ মুখোপাধ্যায়
  • সমীরণ ঘোষ
  • সাক্ষাৎকার
  • সাম্য রাইয়ান
  • সায়ন রায়
  • সায়ন্তনী হোড়
  • সুকুমার মণ্ডল
  • সুজিত মান্না
  • সুদীপ ঘোষাল
  • সুদীপ চট্টোপাধ্যায়
  • সুদেব বকসী
  • সুবীর সরকার
  • সুব্রত পাল
  • সুমনা দত্ত
  • সুমিত মণ্ডল
  • সোমেন মুখোপাধ্যায়
  • সোহম চক্রবর্তী
  • সৌমনা দাশগুপ্ত
  • সৌমাভ
  • স্নেহাশিস রায়
  • হিন্দোল ভট্টাচার্য
  • হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়

Blog Archive

  • September (1)
  • July (27)
  • June (18)
  • May (60)
Powered by Blogger.

ANNOUNCEMENT

Aloprithibi is a monthly blog of poetry and prose about poetry. The editorial board is not responsible for the content and interviews published on the blog. Absolutely the personal opinion of the author and narrator. No reprint of this blog may be published without the permission of the editor and sub-editor. Otherwise it will be dropped under copyright law.
Copyright 2014 আলোপৃথিবী .
Designed by OddThemes