কবিতা : মারুফ আহমেদ নয়ন



একটি পাখির কবিতা


একটি পাখি আমার জানালায় এসে বসে থাকে। আমার চোখে মুখে রোদ লাগে। বৃষ্টির পর পুনরায় রোদ উঠলে পাখিটি পালক শুকায়, যেভাবে মেয়েরা স্নানের পর চুল শুকায়। গুন গুন করে কি যেনো একটা গান গাইতে থাকে। সম্ভবত পাখি গোত্রীয় সে। আকাশে মেঘের মধ্যে উড়াউড়ি করা তার স্বভাব। জাতিতে পুরুষ। সঙ্গীনিকে ফেলেছে হারিয়ে, একা সে খাদ্য সন্ধানে ছিলো, ছানাগুলো ছিল ঘরে। যখন সে ফিরে আসছিলো তখন প্রবল ঝড়, পড়ে আছে গাছের ডালের নিচে সঙ্গীনির মৃত দেহ। সেই কেবল বেঁচে গিয়েছে। তার শরীর কাটেনি ঝড়ে, মনুষ্য নির্মিত কোনো করাতে। 




মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে


জন্ম ও মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে বিশ্বাস রাখতে বলছো। অথচ আমি কেবল এর মধ্যবর্তী জীবনে তোমাকে ভালবেসেছি। ফলে আমার ইহকাল পরকাল ক্ষতিগ্রস্ত। প্রেমে প্ররোচনায় কামনা করতে শিখে গেছি মৃত্যু যেনো তা বর্ষা ঋতুতেই হয়। যেহেতু আষাঢ় ও শ্রাবণ দু-মাস বর্ষাকাল তোমার ভীষণ প্রিয়। যখন আমার বুকের কাছে নেমে যাবে বৃষ্টির জল, মুখের উপর ঠোঁটের উপর ঝরে পড়বে ভেজা কাঁদার প্রলেপ। আমার বুকের উপর ফুটতে থাকবে আশ্চর্য সমস্ত ফুল, তোমার শান্তি হবে না। কেননা মৃত্যুর পর আবারও একদিন বিচারের মাঠে দাঁড়াতে হবে। মুছে যাবে অপ্রেমের আয়ু। তুমি শুধু রয়ে যাবে বুকের ভেতরে যেভাবে পাথর আগলে রাখে প্রিয় পতঙ্গের ফসিল।        




লাশকাটা ঘরে


ক্ষমা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই। দেখো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে তীব্র আলোর রেখা। তুমি যদি আমাকে ক্ষমা করো তবে আমিও তোমাকে ক্ষমা করে দেবো। যদি এর ব্যাতিক্রম হয় তবে লাশ কাটা ঘরে ডোমের হাসি, ছুড়ি ও কাঁচির উল্লাস ফিরে পেতে পারো। হয়ত আমার বিছানাজুড়ে অন্য কেউ বিশ্রাম নেবে। আমি তার শিয়রে বসে মমি প্রস্তুত করবার প্রস্তুতি নেবো। তোমার সে দিকে কোন দৃষ্টি থাকবে না। তোমার একটা সুখী জীবন আমাকে সারাজীবন প্রত্যাখান করে। কাছে যেতে চাইলে কেবল পোকাদের গর্তে ঢুকিয়ে দেয়। আমার এই সমস্ত অনুভূতির কোন ব্যাখা নেই। সূর্য তো চিরকাল পূর্বেই ওঠে, পশ্চিমে অস্ত যায়।




আমার সর্বশেষ পরিচয়


দীর্ঘকাল তোমার জন্যে  অপেক্ষা করছি। বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে গেছি। রোদে পুড়ে শুকনো কাঠের মতো কালো হয়ে গেছি। আমার মাথায় চুলের জটায় জন্মান্ধ পাখিরা বাসা বেঁধেছে। চিবুক ছুঁয়ে উড়ে গেছে অসংখ্য প্রজাপতি। আমি তাদের কাউকে বলি নি, আমি কোন বৃক্ষ নয়। আমার সর্বশেষ পরিচয় হলো মানুষ। মানুষের পুরুষগণ গভীর অরণ্যে বসবাস করতেন। তাজা মাছ ও মাংস আহার করতেন। তারপর নিজ স্ত্রীদের ভেতরে ডুব মারতেন। গাছে ডেকে উঠতো কোকিল। যেনো প্রকৃতিতে তখন বসন্ত ঋতু। সারা অরণ্যময় দাপিয়ে বেড়াতো একটা শাদা খরগোশ। আমি তাকে পুষতে চেয়েছিলাম, বিষন্ন দুপুরে তার দিকে ছুঁড়ে দিতে চেয়েছিলাম, কিছু ফলমূল, এসব কিছুতেই সম্ভব হলো না। তুমি তো জানো, রেশম পোকা মরে যায় তার গুটির ভেতর।




ঝর্ণার অনুবাদ


ঘুম ভেঙ্গে গেছে। জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকে পড়েছে চাঁদের আলো। আমার মুখে তার কালো ছায়া, ধীরে ধীরে গাঢ় হচ্ছে। চাঁদের ভেতরে কি তুমি, চরকায় সুতো কাটছো। আমার জন্যে বুনবে রেশমের নতুন পোশাক। জানো তো, ডুমুর পাতার আয়ুতে ঢেকে আছে সমস্ত শরীর। আমার সেই পোকাগুলোর জন্য দুঃখ হচ্ছে, তারা একটিও তুঁত পাতা অবশিষ্ট রাখেনি। যদি এ মূহুর্তে যদি আমার ঈশ্বর দেখতে আসেন, তিনি কি অবস্থায় আমার দেখবেন। আমার প্রতিটি পশম থেকে ভয়ে ঘাম ঝরছে। যেনো এ মেদ মাংসের শরীর ঝর্ণার অনুবাদ। আর আমি এক মৃত পাথর, পড়ে ছিলাম পাহাড়ের খাদে, যেখান শুধু নীল বর্ণের ফুল ফুটতো, উড়ে বেড়াতো অসংখ্য প্রজাপতি।     




উচ্চতর গণিত


ব্ল্যাকবোর্ড জুড়ে উচ্চতর গণিতের ক্লাস। আমি বীজগাণিতিক সুত্রাবলী ধরে তোমার দিকে যাই। অক্ষরগুলো কি কাঁচের পুতুল, স্পর্শে প্রাণ ফিরে পেতে পারে। জানি না তবুও তোমার কাছে জমা থাকুক ব্যাক্তিগত নিশিন্দার ছায়া। ইউক্যালিপটাসের বেড়ে ওঠা। পরজীবি উদ্ভিদের কান্না। প্যাক্টোনাস নদীর উৎসমুখের গল্প, আমি এসবের থেকে বহুদূরে থাকি। পোষা বিড়ালের সাথে দৌড় প্রতিযোগীতা করি। রোদে প্রজাপতিদের কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখি। সারাটি রাত চাঁদের সাথে কথা বলি, কেননা আমি তো জানি, আমার ক্ষরণের পাশে মৃত্যু ছাড়া অন্য কিছু লেখা নেই।




পৃথিবীর আদি উপাদান


পৃথিবীর আদি উপাদানের বর্ণনা করছো। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছি। জল অগ্নি ও হাওয়ার চিরায়ত ধর্ম। পাপ বুঝি ক্ষমা প্রার্থনায় ঝরে যাচ্ছে। নেমে আসছে আশ্চর্য বৃষ্টির রাত। চারদিকে হাওয়াদের গুঞ্জন, হাওয়াদের ভেতরে বুঝি আজ বালিকার বিবাহ রাত্রি। তবুও কোনো জোনাকিযান নেই। আমার মৃত্যু বুঝি এভাবেই বুঝি কামনা করছো। আমার শবদেহ আমাকে বহন করতে হবে। সাদা কাফন ক্রয় ও কবর খননের জন্য কাউকে নির্দেশ করছো না। তুমি হাত ইশারা করছো আর হাওয়ার ভেতরে অজস্র গাছের পাতা ঝরছে। আমার শব বহনকারী পাখিরা পথ ভুলে যাচ্ছে।

Share this:

ABOUT THE AUTHOR

Hello We are OddThemes, Our name came from the fact that we are UNIQUE. We specialize in designing premium looking fully customizable highly responsive blogger templates. We at OddThemes do carry a philosophy that: Nothing Is Impossible

0 comments:

Post a Comment

সম্পাদক : শুভদীপ সেনশর্মা
সহ-সম্পাদক : মৌমিতা পাল