কবিতা : শুভাশিস মণ্ডল



পাখিদের অজানা কাহিনি


এক 

তুমি ভিজছিলে একা । 
শঙ্কিত কুহুধ্বনি , আঁচড়ের কর্কশ সা রে গা ----
শুনেছি সেসব আমি জেগে বসে থেকে , 
তোমার উদার গৃহে , প্রত্নভারাতুর । 
পালকের তলাকার ক্ষত বৃষ্টি সত্ত্বেও 
স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল । 
এবং কিছু এফোঁড় ওফোঁড় করা ব্যক্তিগত , 
উপমারহিত একটি সর্পাকার লাঠি , 
আজও ধরে রেখেছি । 

দেখ, বুড়ো গাধা , খোঁড়া বেজি, কিউবিক 
ট্রান্সজেন্ডার  একদা আমারও 
পরম বন্ধু ছিল ।  
শোনো গর্বিত সবুজ লতা , পীত টক ফল , 
নিশিদিন মনে রেখেছি সে-বন্ধুতা । 
তবু কোনও সংকেত ছাড়াই ফাল্গুনে 
সেবার বর্ষা নেমেছিল । 

বিশ্বাস কর , 
উনিশশো সাতষট্টির শীত , সোমবার , 
ঝলমলে সকাল  ---- হে মাধব , 
সম্যক উড়ানভ্রষ্ট , সংক্ষুব্ধ 
আমার জন্ম হল  ! 
তারপর তুমি জানো সব । 
রোদ ও বৃষ্টির খেলা । পাখিদের ভাগবত 
অজানা কাহিনি । 




দুই

দৈববলে পাখি ওড়ে । 
এর মধ্যে বায়ু, চরাচর ও শরীরবিজ্ঞানের কোনও 
খেল নিশ্চিতই নেই জেনো । 
পাখি উড়তে চায় জেনে দেবতারা উড়তে দিলেন 
তাকে ডানা আর তিরবিদ্ধ চোখ । 
কালস্রোত থেকে 
অমরতা ছোঁ মেরে তুলবার জন্য বাঁকানো নখ । 
সেই থেকে কেবল একটি ডিমের জন্য 
উষ্ণতার খোঁজে তাকে  হাজার হাজার মাইল 
পথ দিক ঠিক রেখে 
উড়ে যেতে হয় গ্রীষ্মমণ্ডলে । ফিরে আসতে হয় । 
মাটিতে মানুষ থাকে , প্রজাতন্ত্রে 
যারা স্তন্যপায়ী ও মাংসাশী একই সঙ্গে  :
সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত চেনে, তীরন্দাজ, ধীর ও নিপুণ । 
তাই তির ছোটে অহরহ 
            উড়ে চলা একাগ্র যাত্রায় । 
খুন আকাশে ছিটকে 
লাল-গোলাপি-নীল-হালকা শোকসাদা আলো 
একসঙ্গে মেশে । 

নরম সুপক্ক মাংস ছাড়া অগ্নি 
কিছুতে সন্তুষ্ট হন না । 
পরিযায়ী পাখিরা অমর , 
তম্বুরা বাজিয়ে গান ভৈরবী ।
ভক্ষণপর্বে স্রোত প্রকৃতই স্থির হয়ে থাকে । 



তিন

ভুল , তুমি দুধ- হলুদের সার , স্বাস্থ্যকর 
                অনিবার্য পেয়। 
জীবনের বিপরীতে , সত্যের ও মৃত্যুর বিপরীতে 
তুমি পাখিদের সর্দার, ঝাঁক বেঁধে 
সংগীত রচনা কর , একটানা বিষণ্ন কোরাস । 
আবার একাকী 
তুমিই শ্যামা রক্ষিতার মতো অপাঙ্গে কটাক্ষ করে আওড় ভাসিয়ে টেনে আনো পতঙ্গের ঝাঁক; আগুনের লেলিহান পটে 
উড়ে এসে তারা ঝাঁপ দেয়, 
                           সহর্ষ ও উত্তরাধুনিক  ! 
জীবনকে ভালোবেসে মৃত্যুর প্রতি 
এই করুণ আগ্রহ তৈরি করে তারা । 

যদি ইচ্ছা করি 
তোমার সঙ্গে খেলে নিতে পারি কি আমিও 
এক হাত লুডো ? 
অথবা চোখের 'পরে ঠোঁট রেখে শুষে নিতে পারি ওই দ্রাক্ষাগন্ধ ? স্বাধীনতা ?  মধু ? 
ছুঁতে পারি টগর ঝোপের নিচে শুয়ে শুয়ে
দু ডানা বাড়িয়ে 
           তোমাকে পাবার অধিকার ? 

ভুল , তুমি মৃতদের অধরোষ্ঠে লেগে থাকা 
শাশ্বত জীবনের লালা , জীবনের বিপরীতে 
ঘন বনে একনিষ্ঠ 
ছড়ার  ছন্দে চলা শান্ত গাছ অপ্রতিরোধ্য হাঁস। 




চার 

উড়তে উড়তে মালা 
ঘুরিয়ে ছুঁড়েছি কখন নিচের দিকে । 
সুকুমারীকে প্রেম নিবেদন করেছি । 
বটের ছায়ার তলে দাঁড়িয়ে ঊষায় 
সে কি দেখেছে পাখির অনুরাগ ? 
শুনেছে পক্ষবিধুনন ? 
সন্ধ্যায় হর্ষে ও উদ্বেগে জরজর সে কি টের পেয়েছে 
হাওয়ায় ঝরছে পালকেরা ? 
নিঃসাড় মস্তিষ্কের খাঁজে গেঁথে থাকা 
অবুঝ শকুন্ত-মায়া পড়িয়ে নিয়েছে তাকে 
উড়ানের বাংলা ভাষা ? ঋতু ও অন্বয় ?  

সুকুমারী , চল এইবেলা উড়ে যাই 
অন্ধকার বনের ভিতর , প্রস্ফুরিত চন্দ্রতটে 
রূপকথা জন্ম নিতে পারে । দেখ, 
আলো নিভে আসছে অকালে , ছায়া পড়ছে 
শান্তির নদীতে  মিষ্টি জলে । 
তোমার উন্মনা কালো চুলের সঙ্গে কথা বলছে 
                আমার ক্লান্ত রুখু ডানা ! 





হাতিগুলি 


আসামের দেহিং পাটকাই বৃষ্টিবনে যক্ষেরা 
কয়লা খুঁজে পেয়েছে । তাই সেখানে হাতিদের 
পেট্রল হয়ে যেতে হবে হবে । 
মাটি কাদা হবে । আকাশ আগুন ফুলে লাল । 
আর হাতিগুলি প্রণামের ঢঙে শুঁড় তুলে 
বৃক্ষ-বীরুৎ-গুল্মদের সেলাম জানিয়ে 
অকস্মাৎ ধীরে নেমে যাবে 
পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে । 
তুমি এমন কোনও শব্দই পাবেনা
যা সুরেলা নয় বা 
যা হাহাকারসমন্বিত । 

আমরা উত্তর রাঢ়ে বসে, মফস্বলে 
 জৈষ্ঠের অপ্রত্যাশিত 
নিম্নচাপে শীত শীত খবরকাগজ পড়ে 
পরে সবই জানতে পারব । সবই বুঝতে পারব । 
খুনেড়া ভাগোয়া-সবুজ-সাদা 
অক্ষরে অক্ষরে লেখা হবে 
হাতিদের বুদ্ধি ,স্মৃতি ও মানুষের প্রতি 
তাদের বিশ্বাসের উলঙ্গ ও অদ্ভুত কাহিনি ।

Share this:

ABOUT THE AUTHOR

Hello We are OddThemes, Our name came from the fact that we are UNIQUE. We specialize in designing premium looking fully customizable highly responsive blogger templates. We at OddThemes do carry a philosophy that: Nothing Is Impossible

1 comments:

  1. পাখিদের অজানা কাহিনির দুই তিন সংখ্যক কবিতা ও হাতিগুলি তিনটি আশ্চর্য ক্ষমতার কবিতা। প্রণাম কবিকে।
    বিশ্বাস জন্মে যে এমন কবিতা আমিও একদিন লিখতে পারব কোনোদিন।

    ReplyDelete

সম্পাদক : শুভদীপ সেনশর্মা
সহ-সম্পাদক : মৌমিতা পাল