ক্ষমা করো
ক্ষমা করো, ওই চন্দ্রমত্ত ঠোঁটে চুমু দিতে পারছি না
এখন। ক্ষমা করো।
একই চামচ দিয়ে ঝালঝাল টোমাটোর স্যুপ খেতে
তীব্র ভয় লাগছে।
ক্ষমা করো, তোমার রুমালের রঙ কিছুতেই খেলতে
পারছি না হৃদয়ে।
ঘরবন্দী মানুষ
একরাশ আশঙ্কা সমেত ঘরবন্দী মানুষ কাঁদছে।
বিভ্রম মনে আছড়ে পড়ছে ভুতুড়ে।
বকুলের মাধবী, মুকুলের উপমায় দর্শিত মনীষা
প্রতিবন্ধীসম ছড়িয়ে আছে সরণি।
সামগ্রিক বন্ধ দিনে কান্নার সীমাপরিসীমা কতো
সেটা ভাবতে পারে না বিশল্যকরণী।
অদৃশ্য খুনি
যেভাবে ঢুকছে হাসপাতালে, মনে হয় কোনোদিনই
ফিরবে না সংসারে।
মাত্র সে একা নয়, সকল প্রয়াস, বুদ্ধিমত্তা মোহিনী
ভ্রাম্যমাণ ভয়ঙ্করে।
প্রতিরক্ষা বলয় ভেদিয়া ভেন্টিলেশনে অদৃশ্য খুনি।
পৃথিবীর প্রতিকূলে।
ভাইরাস ভায়োলেন্স
কৌরব পাণ্ডব অনুকূল প্রতিকূল সমস্ত তোলপাড়
লালনীল টার্মিনাস বাজার মাজার সন্ত্রাসে দুদ্দাড়
ভাইরাস ভায়োলেন্স প্রাচ্যপাশ্চাত্যের ঘমণ্ড চত্বরে
সাম্রাজ্যবাদী গাড়োয়ান ধ্বসে যায় গহীন গহ্বরে
বিভ্রম
মানবীকে বাঁচাবে বলে কতকিছু দিচ্ছ চড়া রোদ্দুরে
মিডিয়ার মাধ্যমে শুনে ভাইরাস দমনে খাচ্ছ ওষুধ
তথাপি মিথ্যাসর্প পেঁচিয়ে ঘনাচ্ছে অতিশয় অন্দরে
নিজেরই মূর্ত চোখ চুল দাড়ি গোঁফ বানাচ্ছে বেকুব
কোভিড কাহিনি
কোভিড কারণে মৃতদেহ অন্ধকারে
হাপিশ।
কোন সাহসে এসব কথা সম্প্রচারে
ছাপিস।
মন্ত্রী আমলা কাগজপত্রে যে কথাটি
বলবে।
সেটাই চরম লেখ্য হবে, নাহলে ঘাটি
জ্বলবে।
হাহুতাশ
ঝাঁকেঝাঁক ভাইরাস, ভ্রূণ ও গানের মাধুরী হিক্কার
গল্পের জাদু, নৌকোর পথিকেরা ভাইরাসে ছারখার
ব্যাগেব্যাগে জ্যামিতিতে হৃদয়ে ছুটন্ত তীব্র হাহুতাশ
রাশিরাশি ভয় জ্বরজ্বর করে বোধ আকাশ বাতাস
ছিন্নভিন্ন
যাহাই লেখো না কেন গীতল নির্মাণ কল্পনে সুধন্য
ভাইরাসী সন্ত্রাসে শব্দ কল্প ধ্বনি শাস্ত্র বিপদাপন্ন
বিকল্পের বিকল্প সেতুরও ভেঙেছে ডানা আর অন্ন
রৌদ্রশোভা রাস্তা চিত্তের পতনে অচানক ছিন্নভিন্ন
উত্তাল চিয়ার্স
শ্রমিক ব্যঞ্জনা থেকে লালন ও ফ্রয়েডের ঘর থেকে
পিয়ানো পিদিমের ধুন থেকে হৃদিরঙ ফসল থেকে
উঠিয়ে এনে যতোখুশি পোড়াও মারো গণ-ভাইরাস
জীবাণুরা পুড়ে ভস্ম হয়ে গেলে বলি, উত্তাল চিয়ার্স
ধুয়ে ফেলছি
ধুয়ে ফেলি জামাজুতো সর্বোপরি সন্দেহভুক্ত নয়ন
ধুয়ে ফেলি স্টেশনে খণ্ডিত দ্বিধাগ্রস্ত কথোপকথন
শৃঙ্গার দিয়ে আনন্দে জড়ানো রঙ ভরেছে ভাইরাস
অস্বাভাবিক সম্মুখে স্পষ্ট বুঝেছি নিশ্চিত সর্বনাশ
ধামাল সন্ত্রাস
ভাইরাস মাতিয়াছে প্রবল স্রোতে। সরল আলোঘরে
দেখি অনির্বাণ বিষ খাবলাচ্ছে আত্মার সার্বিক ঈশ
দুর্ভেদ্য বিশেষ্য বিশেষণ বানাচ্ছি ধামাল সন্ত্রাসের।
বহুকোষ পরাণে আপন ড্রাগনে মৃত্যুকে পেয়েছিস।
উদ্বেগ প্রবাহ
হৃদয় জুড়ে বিদঘুটে উদ্বেগ প্রবাহ। জামার মধ্যে
বিঁধছে কোন কাঁটাঝোপ। অনন্ত আগুনের চুলবুল।
আত্মীয়তার দিকে তাকালে মনে হয় রন্ধ্রেরন্ধ্রে হুল
ভাইরাস জন্মেছে। পদ্যরহিত সময় নীরস গদ্যে।
কোয়ারেন্টাইন
কোয়ারেন্টাইনে ঢুকেছে আজীবন ফসলের পথিক
সকল পরিজন যেন প্রস্তুত থাকে যে কোনো সময়
কেহই জানবে না কোন ঠিকানায় চলে যাবে রফিক
বৃত্ত কেটে কেটে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে শান্তনু কিম্বা অরুময়
করোনার প্রতিবাদে
স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে পাখিদের গান ভোরের ধর্মীয়
চিৎকার ভেদ করে।
স্বপ্নের ভিতর নিরন্তর কার্বনডাইঅক্সাইড জোন
ঢোকেনি কিছুদিন।
এপ্রিল-মে মাস জুড়ে মেঘচিত্রের কখনো এমন
ক্যানভাস দেখেছ ?
নির্বাক হয়ে আছি
পোস্ট মডার্ন করোনা বিশ্বে সবাই নির্বাক হয়ে গেছি
কোথাও আর লুকোনোর রাস্তা নেই সকল বুঝিয়াছি
গান ধরি ছবি আঁকি সাবানের কাছে উড়িতেছি সদা
অদ্ভুত প্রতাপের মৃত্যুপথ বলিতেছে মানুষেরা ভোঁদা
রাজনৈতিক ধর্ষক
গণতন্ত্রের কোন বাল কাটিবার মহোত্তর উদ্দেশ্যে
ভাইরাস প্রকোপের তথ্য গোপন করিতেছ হে চিফ
প্রযুক্তির শালীনতা ধর্ষণ করিতে করিতে দেশকে
চোদোনযোগ্য পণ্য করিয়াছ হে মহান রাজনৈতিক
ইয়ার্কি
কয়েক টুকরো ভাইরাসের সঙ্গে ইয়ার্কি মারার জন্য
কয়েক লক্ষ ভাইরাস টানটান হয়ে দাঁড়ালো
বেড়ে চলা নখের ধর্মীয় উন্মাদনা, তেমন কিছু নয়
ভাবতেই কোটিকোটি হৃদয় ভস্মিত হয়ে গেল
ধাবমান ভাইরাস
দু'চারশো পাঁচশো হাজার কিলোমিটার থেকে
এসে গেলে মাত্র আধা কিলোমিটারের ভিতরে
তারপর আর কয়েকটি মাত্র সিড়ি পেরোলেই
কপাটের খুব কাছে তৎসম গর্জন শুনি হাঁকে
বেলাল্লা নরক
পরিযায়ী শ্রমিকের ঘরে ফেরা সতত অনিশ্চিত
কেউ কেউ পদব্রজেই ফিরছে শত সহস্র মাইল
যদি ফিরে দেখে সঙ্গে এনেছে বেধড়ক ভাইরাস
বৌবাচ্চা সকল রেখে চলে যাবে বেলাল্লা নরকে
করোনা মুহূর্ত
শাসক বলছে প্রগতি এনেছে দিন বদলের পালা
বিরোধীরা বলছে কোথায় প্রগতি কেবলি মৃত্যুবালা
শাসক বলছে খাদ্য মদ্য সব দিয়েছি নব্য তন্ত্রসুখ
বিরোধী তুলছে তথ্যের চাতুরি শাসকের পোড়ে মুখ
করোনাকে আটকাতে
পারবে না
বক্তৃতাবাজি করে কেউ করোনাকে আটকাতে।
নরক প্রাচীন রাজনীতি, কঠিন কঠিনতর হোলে
ঘর থেকে তুলে আনা আক্রান্তকে শুশ্রূষা দিতে
পারবে না
শেষ যাত্রা
অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার সময় হয়তো সে বুঝেছিল
এটাই তার শেষ যাত্রা।
দেখেছিল সম্মুখে কোনো আত্মীয় স্বজন নেই
চরম নিস্তব্ধতা আছে।
শূন্যতায় অনিমেষ
ভাইরাস নিবেদিত মুহূর্তগুলি
পৃথিবীহীন এক পৃথিবী
ব্যাখ্যাযোগ্যতাহীন শূন্যতায় অনিমেষ
কোয়ারেন্টাইনে শুয়ে আছে দেশ
ভয় করছে
লাউ কিনছি কলা কিনছি কিম্বা সজনে ডাঁটা
টেবিলে রাখছি গণিতে ভর্তি স্বনির্বাচিত দানা
আমি কি জানি কোন পণ্যে কে দিয়েছে হানা
ভয় করছে গীতা, ভয় করছে ধরতে বইখাতা
উন্মাদগণ কহে
ধর্মীয় উন্মাদগণ কহে
করোনা ঢুকিবে না ধর্মীয় জমায়েতে
না হে না, না না না, ধর্মীয় হেফাজতে
শুধু ভাইরাস কেন, ওষুধপত্রও ঢুকিবে না
ধর্মীয় উন্মাদগণ কহে, ওইখানে আছেন সর্বোত্তমা।
করোনা ঢুকিবে অন্য কোনো জাতে নিরীশ্বর বাতে।
করোনা ঢুকিবে না ধর্মীয় জমায়েতে
ধর্মীয় উন্মাদগণ কহে
মৃত্যুর প্রতিযোগিতা
করোনাকে ধরে মৃত্যুর প্রতিযোগিতা সারাবিশ্ব জুড়ে
শবের সমুদ্র শায়িত হচ্ছে বন্য মৃত্তিকা খুঁড়ে খুঁড়ে।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগেছে ভায়া কোনোই অস্ত্র না ছুঁড়ে
লক্ষ মানুষ মরে যাচ্ছে শুধু মানসিক সংকট ঝড়ে।
শেখালেন তিনি
কতটা কাঁদবে কতটা লড়বে কিভাবে বাঁচবে ছেলে।
জনতাকে শেখান মুখ্যশাসক কিভাবে ফুঁসবে হেলে।
এতোদিন পর দেখাচ্ছেন আপনি কিভাবে মধু খাবো
কোনখান হতে মাখিয়া সাবান জীবাণু বিজয়ী হবো।
স্যালুট, কোভিড
ঝার তো প্রচুর খাচ্ছি জীবনে, তবু এমনভাবে ঝার
খাইনি কখনো। স্যালুট, কোভিড উনিশের মারমার।
চুরমার পার্লার, শাসক ব্রথেল, ধসে যায় রাজাকার
দুর্দান্ত হেরেছে সাম্রাজ্য দখলের চিরন্তন হাতিয়ার।
মেয়েকে বলছি
মেয়েকে বলছি, জানলায় উড়ে আসা ঘুড়ি এখন
ধরতে যেও না মা। বাইরের দরজায় লেলিহান
জীবাণুরা থাকতেই পারে, সন্দেহ করো না।
জুতোর নিচেও কি ভাইরাস থাকে, ঊষাচর চাইছে
জানতে। মেয়েকে বলছি, স্যানিটাইজারে মাখতে
জুতো, তার আগে পার্সটিও ঘরে তুলো না।
পরিযায়ী শ্রমিক
কতোদিন হয়ে গেলো ফিরতে পারছো না বাড়ি
হাজার কিলোমিটার কিভাবে হেঁটেই দেবে পাড়ি
মোড়ে মোড়ে ব্যারিকেড সংক্রমণের হাতছানি
ফসল পচছে কৃষিক্ষেতে চোখ থেকে ঝরে পানি
ABOUT THE AUTHOR

Hello We are OddThemes, Our name came from the fact that we are UNIQUE. We specialize in designing premium looking fully customizable highly responsive blogger templates. We at OddThemes do carry a philosophy that: Nothing Is Impossible
বাঃ অলোক এই কবিতাগুলো দারুণ হয়েছে....কয়েকটা বেশ ছন্দেও আছে...ভয়ঙ্কর সময় ছুঁয়ে আছে কবিতার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ....
ReplyDeleteকবি সময়কে ধরেছেন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে কবিতায় কবিতায়। আছে নিজস্ব সাক্ষর আনাচেকানাচে শব্দের।
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো।একটা স্পষ্ট ছবি।একটা আন্তরিক নির্মাণ
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো।একটা স্পষ্ট ছবি।একটা আন্তরিক নির্মাণ।
ReplyDelete