কবিতা : বিজয় সিংহ



যদি চর্তুদশপদী


চর্তুদশপদী যদি দু'পায়ে ঘুঙুর চোখে গীত
তুমি কি সন্ধের হয়ে জাদুকরী দেখাবে আমাকে
তুমি কি ছত্তিশগড়ী মুদ্রা হয়ে যাবে দেশাতীতে
রাষ্ট্র যদি অসম্মত, তুমিই পত্র পুষ্প ভূমি ভূমা

আমার স্বরাজ্য নেই দেশ অর্থ দেয়াল ও জুঁই
আমার জুঁই-এর গন্ধ পারাপার করে স্বপ্নলোক
স্বপ্নলোকে ছ-ফোয়ারা জল-শীর্ষাসনে আমি শুই
হেজিমনি বিদ্যুতের, বিদ্যুতের পুত্রকন্যা হোক

চর্তুদশপদী তুমি বিদ্যুতের কারুমুদ্রা নিও
আগুন - জলের দেশে ছায়া থাক তোমার পায়ের
পঙক্তিতে আলো হোক স্তবকের পাশে কালফনী
মিথ নিয়ে হাওয়া যাক এবাংলার এগাঁয়ে ওগাঁয়ে

চর্তুদশপদী যদি শ্রীচরণে রক্তজবা রাখি
দেখাও বিম্বন মায়া বিষাকাশে উড়েছে পাখিরা




টেবিল


পল্লবগ্রাহিতা থেকে মুক্তি দাও বলে যে পাতারা
ঝরেছিল, ছড়িয়েছি গান্ধর্ব - টেবিলে। মধ্যযামে
যাবতীয় সংবিধান লঙ্ঘিত হয়েছে জেনে শ্যাম
মথুরা গেছেন, সাত - আকাশেরা চুপ ; ছন্নছাড়া

বসন্তও বহুগামী - ভিখিরিরা গেয়েছে তেমনই
পর্যাপ্ত ভিখিরি হয়ে অকলঙ্ক খাতায় লিখেছি
কুয়াশা বিস্তর, সব কবিদের জন্য গোপবালী
পুষ্প ব্যবহারে শেখে : ফুলের কাছেই প্রেম ঋনী

কীভাবে শালের বীজ ঘুরে ঘুরে নামে সে সংবাদ
মথুরাপতিকে যেন জানায় অক্রুর ; বাহ্যজ্ঞান ---
শূন্য রাই দেখ-ভাল করেছি এদ্দিন, ক্ষুব্ধপ্রাণে
বলছি আজ বাঁশিটিও সুবিধের নয়, যে কঙ্কাল

ভাসিয়ে নিয়েছে জল এ সনেট আনুক হদিশ
তার, টেবিলে ছড়ানো পাতা ফুল অন্তর্ঘাতী হৃদি




ব্রিজ


ভুমধ্যরাতের শিস শুনেছিল মাইগ্রেন্ট পাখিরা
তাদের চঞ্চুতে চোখে বালিঝড় আমার ভাষার
মতো, তুমি যামিনীর বৃংহন বুঝেই পারাপার
করেছিলে, ব্রিজে ছিল পুরোনো কাঠের আঁকিবুকি

ভাষায় রক্তের ফেনা আলজিভে পরখ করেছি
কতদূর নোনাস্বাদ কতোবেশি জটিল বিস্তার
তার, সেভাবে বুঝিনি ; মাটির নাভিতে ভুখমার
পোকা হয়ে মরে গেছি -- সেই মৃত্যু দিলে বুকভরে

নিয়েছি সে চমৎকার, ওলো এই অন্তিমের দেশে
মনে পড়ে শলাকায় বিদ্ধ হয়ে তোমার অমতে
নিয়েছি গলায় কন্ঠি ; এ বাংলা ভাষার দুই স্তন

পান করে মোক্ষ নেব, মোক্ষের ঘোরালো গ্রন্থি সব
খুলে খুলে ঢুকে যাব সংসক্ত আলোয়, আশৈশব
দেখেছি ব্রিজের নিচে কাঁপে চাঁদ, রাত্রি নামে স্নানে




উপত্যকা


শকুন্তলে নাটকেই ফিরে যাও ; এই উপত্যকা
রোমান্স হারানো ; বহ্নি - তাপে আকাশের উপশিরা
ফেটে পড়ছে স্বভাবত, দূরগামী উপোশী স্মৃতিরা
তাদের তণ্ডুলকণা দিতে হবে, অলীক সুপথ্য

পেয়ে জলজ্যান্ত বাতাসেরা উড়ে এসেছে আবার
ঘোলাটে দুচোখ নিয়ে শাসিয়েছে কড়া মাল্যবান
মেনিটি ফিরেহে ফের ছানা নিয়ে পাশের বাগানে
আকাশের তন্ত্রঘেঁটে ভস্মচাঁদ নিয়েছে আকার

তোমার সংলাপ ঘাঁটি ঘেঁটে দলিলের লাল ফিতে
বাঁধি, অকরুণ এত মোহময় ছিলেনা আগেও
যখন সংক্রান্তি এসে গেয়ে যেত দেহাতি ফাওয়া
যখন অস্মৃতি এসে তাজা ওম এনে দিত শীতে

সেসব শরীরী থেকে স্মৃতিহীন এ উপত্যকায়
আমার সর্বস্ব পোড়ে, আমার সর্বস্ব নিভে যায়




কুয়ো


কক্সবাজারের সন্ধে জহর দেখেছে, আমি নয়
আজমেড় বাজারে কত খুঁজে মরছি সেই কুয়ো যার
জল কখনও নামেনা, সেইসব জলের সংসার
এখনও কল্পিত আলো দেয়, স্বপ্নে খুব ভয়ে ভয়ে

যে দৃশ্য দেখেছি তাকে জহর দেখেনি, আদগ্ধ পা
কেউ শেকলে বেঁধেছে, দুইহাতে ছাপা হলোগ্রাম
কিসের জানেনা কেউ, রেডিওতে শেষ কারিগ্রাম
বিবিধ্ ভারতীর, জান দোকানের পাশে ওপারের

লোকজন, রাধেশ্যাম শা-ই আমার নিয়তি বুঝে
খুঁজছি জাঁহাবাজ সেই দুর্জয়, যে একফালি মেঘ
দেখে বারিষের খোঁজ দেয়, সন্ধে নামছে কুজনের

সন্ধের যাকিছু আজ দু-চোখে নিয়েছি, ছ-দুয়ার
নিষিদ্ধ জেনেও ঢুকি যতিক্ষত পা, রাত্রির মেয়ে
জল চাইছে... তৃষাতুর কৃষ্ণজলে পূর্ণ ছিল কুয়ো




মেয়ে


মেয়ে তুই বিম্ববতী হলে দেখি মুখোস ও মুখ
কতখানি মিলিজুলি, অতিশয় স্যাটান প্রসাদে
উটের গ্রীবার চেয়ে উঁচু হয়ে উঁচুদের রাতে
মাথা ঠেকে নরকের খোলে, চোখে ঘোলাটে কামুক

আমি তোকে নিয়ে যত শিল্পে ও ভ্রমণে গেছি ; যম
কাটাকুটি খেলে গেছে, ভ্রম নালি - ঘা'য় কুক্ষিগত
করেছে উদাস, তুই ঈশ্বরের প্রাসাদের ক্ষত
যতই ঢাকিস হাতে, কারুকাজে, পণ্ড হয় শ্রম

পরুষ-বঁটিতে রেখে আমাকে দু'ফাঁক করে দিলে
এখন বুঝেছি এই পুরুষের কোনও মুক্তি নেই
মুক্তি ওড়ে তোর বদ্ধ আকাশের ওপারে নিখিলে

তোর মুক্তি মঞ্জিরায় ধর্ম তোর স্তনে, ইশারাতে
সব দগ্ধ বৃক্ষ হয় সব বৃক্ষ মেঘের গহনে
পুণ্যজল ভরে, বৃষ্টিজলে ভাসে লিঙ্গ, নিশানাথ

Share this:

ABOUT THE AUTHOR

Hello We are OddThemes, Our name came from the fact that we are UNIQUE. We specialize in designing premium looking fully customizable highly responsive blogger templates. We at OddThemes do carry a philosophy that: Nothing Is Impossible

2 comments:

  1. লেখাগুলি খুবই ভালো লাগলো

    ReplyDelete
  2. অনুসর্গ - বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত বাংলা ভাষায় আবহমান বাঙলা ও বাঙালির শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা। যা মানুষের মননে-মগজে স্বাধীন চেতনার স্বাদ পৌঁছে দিয়ে পারস্পরিক আত্মিক সম্পর্ককে ঋদ্ধ করে চলে...

    অনুসর্গ'র ওয়েবপেইজটি ভিজিট করুন https://anusargo.com

    শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পূর্ণাঙ্গ অনলাইন মাধ্যম।

    ReplyDelete

সম্পাদক : শুভদীপ সেনশর্মা
সহ-সম্পাদক : মৌমিতা পাল