কবিতা : প্রদীপ চক্রবর্তী


খড়ের রাক্ষস 


এক


এলোমেলো অটবী ,
যার মনের  বিনিদ্রা ব্যাধি সুতসোম জাতকের দেশ থেকে ফিরে এসেছে | ঘুমের ঔষধের তীক্ষ্ণ ও জোরালো আলো সুড়ঙ্গের গহবরে দিশাহীন একঝাঁক সমুদ্র মরালের ঠোঁটে বয়ে আনে ঘুমের খাদ্য এক অর্ধ যাযাবরের জন্য | 

সে ভাবে কতকাল আমি ঘুমোই নি কবে থেকে তা আর মনে নেই ...

যতদূর পর্যন্ত মনে করতে পারে ঘুমের মধ্যেও তার জাগরণ , সুষুপ্তি কুহকে পূর্বগামী প্রকৃতির কাছে | পা থেকে মাথা পর্যন্ত জড়ানো , গর্ভিনী ভাবান্তর প্রত্যাশী সর্পমিথুন মাংসপর্ব পেটিকায় ,
ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যের মধ্যে তার এই অতীন্দ্রিয় অস্তিগ্রাহ্যরূপ ...

লুপ্ত অপ্সরার ডানার সঞ্চারকালে সর্বপেক্ষা বঞ্চিত  যারা , পুনরায় প্রবাহিত ফসলের কীটে ,
কীটের ক্ষুধা আর কামনায় 

সম্পাত বিন্দুর থেকে নেমে আসে অধোমুখ নক্ষত্রগুলোতে 

সে ভাবে , স্বাদ ও সংশয়ে | অঘোর  রমণীদের 
কথা 
অনিত্য আলাদা অল্প মৈথুন বা অরণ্যানী মাতা হয়তো পুনর্বার অন্য ছকে বদলে -- সাজিয়ে দিতে পারে ঘুমের দৃশ্যকে বাঁচিয়ে শেষ বল্মীক পোষাকে ...

অপমানিতের আত্মহনন .... বিকল্প এক হেমলক পাত্র ...
কতকাল রয়েছে মন ! 
প্রাচী অভিযাত্রী ভ্রুণ ধ্বংসকারী ঘোড়াদের উপদংশ বহনের পাপ আর নেই ,
নেই , ভুক্তভোগী ভিন্ন  শরণার্থী  কোনো কুকুর সৌরপরিবারে ...




দুই


মূর্ত হরিণ শিকার , যা বনের পরমান্ন ...

তোমার জন্য যাই নি অবলুপ্ত মূলদেশের দেহকান্ড ধরে 
কেমন সুন্দর ওই অকরুন ক্ষতে নিষাদযাপনের সাকিনা ...

জল প্রভূত নষ্ট হয়ে শেষ হওয়াগুলোকে শেষ করে 
কতো পরিখা পৃথিবীর মাঝ মধ্যিখানে প্রয়োজন 

ফোটায় গুটিকা গাঁয়ে হরিৎবনের হরবিলাস ...

তুমি এক শিকারী সকল ,
জলহীন মিহিজামের মেঘ আসছে আকাশে ,
বাল্যকালের রামগড় থেকে
 অলোকাপুরী টকিজে ছুটেছি  চারআন্নি নিয়ে  কুমার যক্ষের নটরাজ ভৈরবীর নেত্য দেখতে 

সারাংশময় ঘোড়াকে দামাল করেছে প্রাণের পণ্য 
একটুকরো খাদির চাঁদ মধ্যউত্থানের শেষে পুড়ে যায় 

আকাশের মনমরা বালিয়াড়ির ওপর 
ছুটির নরম রুটি , মিঠে শাঁস (ডাবের)
মুখে নিতে কি যে ভালো লাগে !




তিন


একটা আলাদা রকম গন্ধ আছে ফুলের ...

সমস্ত শব্দের গায়ে গায়ে গন্ধের সমবেত অন্তর্জলি 
দারুণ সব জলসত্র |  পুলকহেতু নিমিলিত সকালে শব্দ করে ঢালে গরম দুধের চা ,
গরম জল গলায়  খাঁকারি দিয়ে ঢালে ...

মন্বন্তর নয় , ডিহির অধিকার নিয়ে মজদুরবর্গ 
ঘন বন নদী আর  গোঠের অবসাদ কানাই ,
বাঁশির ঘূর্ণি -- লু ,
ডাল তেল নুন মোমবাতি কিনে 
গানের ছানাপোনা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে 
নীহারিকা ছবির মানুষ দুগ্ধফেননিভ শরীর খুলে ফেলছে 
আংরা হলে প্রকট পেশির নীচে লুকিয়ে 
কতো পরগাছা রাতের রঙ 
সীমান্তবর্তী এক বনপথ দু পাখির প্রণীত ...




চার


তুমি একা আঞ্চলিক , মনুষ্যবিহীন দেশে স্বনির্বাসিত ...

একটা মধ্যবর্তী বেণুগোপালবাবু ,
পায়ে এলেবেলে দিকক্রবাল 
আর বুকপকেটে শতছিন্ন কাগজ ওল্টানো ডটপেন 
সেই তোমাকেও পৃথিবীর রাস্তায় দেখা যায় !

বেড়ালটি সঙ্গী হয় কখনও সন্ধ্যায় 
এতো কাছে এসে পড়া  বনশ্রেণী , 
আমিষ কি নিরামিষ বাজার , হস্তরেখার ফুটপাত বই 
মেয়েটি চলেছে আগে আগে 
ঝটিকা মুগ্ধ আধা শহরের পথে ,
তোমার টুকরো টুকরো ছায়া নিয়ে হত্যার স্বাদ 
পূরণ হলো কি  নিশিবালা ?




পাঁচ


শেষ দৃশ্যের জন্য সূর্যাস্ত দেখতে পরপুরুষ চাই 

প্রতারক পাতক শরীর 
তাবৎ কামনা 
সৎ --চিৎ -- আনন্দ হয়ে 
দেখা হয় না দু ' আনা সোনার খাদে 
পরিধেয় পোকায় কাটা ...

ইন্ডিগো আকাশের মাঝ থেকে নেবুলার লম্বা ফালি 
মূলবিহীন সমস্ত উপাঙ্গ ছড়িয়ে 
বালতির জলে টলমল করছে ...

আলোকিত আক্রা বাজার 
বিপন্ন গুহায় জ্বলছে আগুন 
গুহার বাইরে উড়ছে ধুলোর মতো 
নিম সরস্বতী ....

শেষ দৃশ্যের আগে একটু স্নানের প্রয়োজন ...
স্নান শেষে ঊনষাট পাপকর্মে  অধমার্গে নেমে আসতে হলো 
এই  সারাক্ষণ সারাটা সময় 
শরীর থেকে মাংস ছিঁড়ে নিয়ে 
ক্ষুধা পাগলের জন্ম হয় ,
কাঁকিল্যা গ্রামের মাচায় পাথর --চাপা তুলোট কাগজে বন্দি শ্রীরাধার হাহাকার শুনে উড়ে আসে বাঙালী আত্মঘাতিনীর ফাঁসুড়ে শাড়ি ,
 মর্গের রাতচৌকিদার নবমীর কাঁচা জ্যোৎস্নায় 
মহাকাব্যের উপেক্ষিত প্রসূতিকে শেখায় সারিগান ...

লেখ্যভাষা ও চলিত অভিমানে চা ফুরোবার আগেই দেখলাম 
সেই সে মরা মালতী 
সন্ধ্যা বাজার থেকে হপ্তা বাজারে ঘুরে মরছে ,
বিদেহী আশানন্দে ,
পুনরায় বলাৎকারের জন্য ....

Share this:

ABOUT THE AUTHOR

Hello We are OddThemes, Our name came from the fact that we are UNIQUE. We specialize in designing premium looking fully customizable highly responsive blogger templates. We at OddThemes do carry a philosophy that: Nothing Is Impossible

15 comments:

  1. খুব ভালো লাগল । তৃপ্তি পেলাম ।

    ReplyDelete
  2. অবিন্যস্ত চেতনায় এক বিক্ষিপ্ত আততি সময়ের ধূসর প্রচ্ছদ হয়ে উঠেছে। আমরা মরমে বিদ্ধ হচ্ছি প্রতিটি উপলব্ধিতে ও বোধে। সেই ঢেউগুচ্ছকে কবি শব্দায়িত করেছেন নম্র বিধুর অথচ অনপনেয় এক বিস্মিত আলোকে। সেই পর্যটন আদিমতার ক্রান্তিকাল থেকে সভ্যতায় দিগন্তদিশারি হয়ে উঠেছে:
    "আলোকিত আক্রা বাজার
    বিপন্ন গুহায় জ্বলছে আগুন
    গুহার বাইরে উড়ছে ধুলোর মতো
    নিম সরস্বতী ...."

    ReplyDelete
    Replies
    1. তৈমুর দা , আপনি দীর্ঘদিন ধরেই কবিতার স্বতন্ত্র ভাবুক | আপনার চেতনা বোধ মেধা ও ঋদ্ধ মনন সেই গভীরকে স্পর্শ করে , যেখানে কবিতা ছাপিয়ে ভাবনা সীমাহীন দূরপনেয় সত্যের মৌন মুখর বিক্ষত সময়ের মুখ দেখতে পায় ...
      ভালোবাসা দাদা

      Delete
  3. বরাবরের মতোন ভালোলাগা

    ReplyDelete
  4. খুব ভালো। কিছু কিছু আমার কাছে খুব কঠিন হলো।

    ReplyDelete
    Replies
    1. পড়ছেন নিজের মতো. করে সেটাই তো অনেক ....ধন্যবাদ ....

      Delete
  5. অসাধারণ অনুভূতি। ধন্যবাদ কবিকে।

    ReplyDelete
  6. খুব ভালো লাগল প্রদীপ। আপনি বারবার নিজেকে ভাঙছেন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. চেষ্টা করছি সৌমনা ...ধন্যবাদ অনেক

      Delete

সম্পাদক : শুভদীপ সেনশর্মা
সহ-সম্পাদক : মৌমিতা পাল