ঝড় আসছে, জানলা বন্ধ করা দরকার।
এক অসুখের আশঙ্কায়
এ বাড়িতে দীর্ঘদিন বাজে না কলিংবেল!
বৃদ্ধ মা, ডায়াবেটিক বর।
মেয়ে? সে বিদেশে। সামলে নিয়েছে ওরা।
খুলে যাচ্ছে অফিস শপিং-মল।
মৃত্যু থেকে খুলছে জীবন;
ধুলো জমছে ছবির ফ্রেমে। ডাস্টিং বারণ।
তবু শাশুড়ি-মার ছবির জমা ধুলো
ঝাড়তে ঝাড়তে মনে পড়ল, আজ মাতৃদিবস।
তিনি দূরে গেলেন পোশাক বদলাতে, দুবছর
দরভিশ ঘোর
আমার ঘুমের কোনো রাত্রি নেই
ব্রহ্মমুহূর্ত ছুঁয়ে ছুঁয়ে সময়
ধ্বনি, মন্ত্র, গান, অমনষ্ক ঘুম...
অন্ধকার ফুঁড়ে জেগে ওঠা আহির ভৈরব আলো।
জগজিৎ গাইছেন : 'দর্দ সে মেরা দামন ভর দে
ইয়া আল্লাহ্...'
কোথাও কেউ নেই। কেউ কি ছিল?
ধ্বনির পালকে কে রাখছে দরভিশ ঘোর,
ঘুম
[০৩ মে, ২০২০]
রাইনের কাছাকাছি থাকে মেয়ে
আবার ফিরে যাওয়া মন্থর মুহূর্তে
মুহূর্ত সময়ের ভগ্নাংশে বায়বীয়, তবু
শেষ হয় না, জুড়তে থাকে পরতে পরতে।
ধ্যাননিমগ্ন কম্বল আসনটি কি আলাদিনের
উড়ন্ত গালিচা না লুফৎআনসা?
ভাববো দ্রুতগামী কে?
আমি কি পারদর্শী? আমার ভার্টিগো অল্টিচুইড সমস্যা, তবে! সে কি এজন্মে
একবার অন্তত পাখিজন্ম পেতে চাইবে
রাইনের কাছাকাছি
[০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০]
অস্থির
চোখ জুড়ে আসে
ক্লান্তি--
আকাশ বলছে
অন্তিম
নিবিড় নীলিম
সত্য--
রাত জাগরণে
নির্ভার।
একঘেয়েমির
বৃষ্টি
কেউ বলে চলে
ফিসফিস
রেশ কেটে যায়
উষ্ণ
প্ৰস্রবণের
উত্তাপ--
পথ খুঁজে নেয়
আর্তি
বাকি সবকিছু
অস্থির!
[জুন, ২০২০]
পৌঁছানো
যেতে গেলে শেষ পর্যন্ত হামাগুড়ি দিতে হবে।
আজকাল হাঁটু ভেঙে যায়।
পুরোনো বিকেলের মতো শরীর
তাকিয়ে থাকে মিত্রাক্ষর আসঞ্জনে।
কালঞ্চ ফুলের ছায়া এখন নিমেষজুড়ে
শীতের উলে গরম সোয়েটার বুনে চলেছি।
তার জালের খোপে মৎস্যকন্যা ঝলসে যাচ্ছে।
এই লাল ফুলের রক্তে আমেজি
আচারের রোদ, তেল গড়িয়ে পড়ছে।
অথচ হাঁটতে গেলে হাঁটু ভেঙে আসে।
সিঁড়ি ভাঙি, কত উঠি কত পড়ি। অনুধ্যান।
শিরদাঁড়া নমনীয় হয়ে যেতে যেটুকু কঁকিয়ে উঠে
হামাগুড়ি দিতে থাকি...
[২৩ জানুয়ারি, ২০২০]
খমাজ আকাশ
খমাজ রঙে বিষণ্ন আকাশ
গা চুইয়ে ঝরে পড়ছে সন্নিবদ্ধ সন্ধ্যা।
অনসূয়া মুখ এলিয়ে দেখছে।
আকাশ না সন্ধ্যা তা তো তার
বোঝার কথা না।
তার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে 'ওসমান গণি'
দক্ষিণকোণে বাঁক নেয় একটা এরোপ্লেন
অনসূয়া খোঁজে পায়ের নূপুর
'কৌন গলি গয়ো শ্যাম...'
ডুকরে ওঠে মিশ্র খমাজ
যা বলার
একমাত্র নিজের মৃত্যুকামনার ভিতরে
সততা থাকে, যদিও আংশিক।
সম্পূর্ণ কিছু কি হয়?
ভেঙে টুকরো হয়ে যাওয়া
প্রতিটি অংশ সত্যি বলে, মিথ্যে বলে
নিজের নিজের মতো, মতান্তর।
মতান্তর মৌন হয়ে এলে ভাঙা টুকরো একত্রে
স্বচ্ছ দাগহীন স্ফটিক প্রিসম,
রোদ ভেঙে রামধনু, শুরু করা যাক যা বলার
[৬ মার্চ, ২০২০]
যত্নের হাত
ঘুমের মাঝে শীত বেঁধে রেখেছিল তোমায়
রোদ এসে পড়লে চোখ কুঁচকে কেঁদে উঠলে।
যে গাছগুলো পাতা ঝরিয়ে একটু ন্যাড়া,
তাদের দেখতে দেখতে কতদিন বাদে যেন
ভূতে পাওয়া অন্য তুমি!
তোমার আলাদা ঘর পরিচিতি
ঝাড়পোঁছ হয়নি অবহেলায়। তুমি তার
মলিন ধুলোয় যত্নের হাত ছোঁয়ালে, একা।
পিঠের নগ্ন ঢাল তাতিয়ে বোহেমিয়ান রোদ্দুর...
চতুর্দশপদী
পেরিয়ে এলাম তবে দীর্ঘ দীর্ঘপথ
মুখের গঠন যেন প্রাচীন কাঠামো,
মুঠো ভরে ধরে রাখি কঠিন শপথ
নিরলস চেতনার আহরিত ধর্ম
দিয়ে গেছি তোমাকেই বুঝে সহনীয়।
বিরতি কর্মের বুঝি এইটুকু ঋণ,
আত্মজা নিপুণ রাখে দান গ্রহণীয়
স্নেহাশিস তাকে দিয়ে আমি দায়হীন।
অমৃত ঔরস বাজে সুরেলা ভৈরব
শিশিরের ভেজা পথে বিনীত আলাপ,
শারদীয়া ভোর। সাদা শিউলি বৈভব
ঢাকের কাঠির তালে নিহিত উত্তাপ।
কী যে দিতে পারি তাকে ইচ্ছের নিভৃতে
হৃদয়ে বিরাজ করে অভিলাষী স্রোতে।
অজয় দাশগুপ্ত কাব্যসংগ্রহের প্রুফ দেখতে
দেখতে মনে হয়েছিল বাবা কি এরকম ভাবতেন?
[জুলাই, ২০১৯]
বাবা
কথাদের কথা না বলতে দিয়ে কেটে গেল
তেরোবছর। যখন তুমি ছিলে
উচ্চারণ ঘিরে, কথা ছিল। মৈত্রীর কথা
তর্কের কথায় ছিল না অনুশাসন।
বাবা, তুমি কি একটু বেশি প্রশ্রয়ী ছিলে?
প্রথম কথা বলা : 'কে?' অবাক তুমি!
'মা' বলিনি, বলিনি 'বাবাও'।
দ্বিতীয়বার কড়া-নাড়ার শব্দ,
দরজা না খুলে আমাকেই দেখছ তুমি!
আবারও ছোট্ট আমি বলে উঠলাম : 'কে?'
আত্মহারা তুমি, মা। তোমার মুখে শোনা বড়ো হয়ে।
এখন হাবিজাবি তর্করা শব্দময়। কথারা
নগ্ন ঊর্ধ্বমুখী চুপচাপ!
তুমি কি শুনতে পাও বাবা?
[১৭ জুন, ২০২০]
ABOUT THE AUTHOR
Hello We are OddThemes, Our name came from the fact that we are UNIQUE. We specialize in designing premium looking fully customizable highly responsive blogger templates. We at OddThemes do carry a philosophy that: Nothing Is Impossible
তোমার দশটা কবিতাই পড়লাম ।
ReplyDeleteমাতৃদিবস ... খুব ভালো ।
দরভিশ ঘোর ..চমৎকার ।
বাবা ...অসম্ভব ভালো ।
যা বলার ও যত্নের হাত ...ততোটা ভালো লাগেনি ।
চতুর্দশ পদী ..অসামান্য ।
অস্হির ও পৌঁছানো ...সেরা ।
রাইনের কাছাকাছি মেয়ে ....খুবই ভালো ।