সন্ধ্যের ভাঙা আলোর পাশে বসে
আমার কান্নার নিবিড়তা রোপণ করি
একটা বেদনা-বিপুল নদী ...
দিনান্তের পর ফেরি ছেড়ে গেছে
আমাদের আলোহীন রাস্তায় নিভে গেছে পথ ---
পথের শরীর, দূরে দাঁড়িয়ে থাকা একা ল্যাম্পপোস্ট ---
ক্রমশ আমাদের চোখের গায়ে নীরবতা নেমে আসে
বেজে ওঠে মাঝিদের গান
এরপর আমাদের নুড়ি পথে
হলুদ ফুলের মতো একটা তেজপাতা রঙের বিকেল
কেমন ঝুলন্ত ব্যালকনি থেকে
ধীরে ধীরে জলছবি হয়ে যায়
শান্ত নদীর বুকে ভেসে যায় শূন্য নৌকা ...
আমাদের ফেরিঘাটে তখন পড়ে থাকে ফুরন কাঠামো
দেবতার সমাধি সলীল, একটা ভাঙা সন্ধ্যে
এরপর পাখি ঘরে ফেরে
পাখির পালকের ভাঁজে ডানা বাঁধে রাত
নেমে আসে রাতের পরাগ-শরীর...
ফেরা
আলপথ ধরে একটা সন্ধ্যার কাছে এসে বসি।
দেখি সময়ের গলিপথে এক একটা নীল কাশবন চলে যাচ্ছে ...
ছিঁড়ে গেছে নৌকার পাটাতন ---
কয়েকটা ঝুপড়ি কোলাহল ছেড়ে
শেয়ালকাঁটা ঝোপের মতো আমাদের একান্ত-যাপনের পথে ...
একটা বাঁশের খুঁটির গায়ে জ্যোৎস্না-পৃথিবী এখানে রোজ থামে।
নোঙর ফেলে নদীর বুকে।
তারপর কয়েকটা ফেরি। ডাক-টিকিট। খুচরো পয়সা।
আমাদের পড়ন্ত জীবন। একটা অনন্ত সন্ধে ...
ছেলেটি বাঁশি বাজাতে বাজাতে দাঁড় টানে।
মৃদঙ্গ আঁকে জলের বুকে।
আমাদের সে নিয়ে যায় সেই প্রান্তিক মাঠে।
যেখানে একটা স্ট্রিট লাইটের পাশে
মেহগনি ছায়া পড়ে অন্ধকারের বুকে রাত্রি নামে,
ঘুমন্ত রেলগাড়ি অভিসারে যায়...
সাঁকো ধরে আমরা আবার ফিরে আসি নদীর কাছে।
আমাদের গলির গায়ে তখন অবিকল লেগে থাকে
সদ্যজাত পাখির মতোই লুটোপুটি খাওয়া একটা অভুক্ত ভোর।
মাঝি
অন্ধকার তার নিজস্ব ভাষায় কথা বলে। নিজস্ব আলোর রঙে এঁকে দেয় সমস্ত মোমরঙের ঘর-বাড়ি। দাঁড়-ভাঙা নৌকার অজস্র বুনন। মাঝি ডিঙি বায়। নিখুঁত সন্তর্পণে মাছের চোখের মতো আলুথালু হয়ে লেপটে থাকে জলে। ক্রমশ গভীর স্রোতে। জলের ঘনত্ব মেপে রূপকথা নগরীর পাড়ে এসে দাঁড়ায় কোনো এক প্রাচীন বৃদ্ধা। হাতে তার জোনাকি-লণ্ঠন। রিনরিন বাঁশফুলের মেদুর মোহ। জল কলকল... মাঝি ডিঙি বায়। নিপুণ সুতোর জালে ক্রয় করে সময়ের কারচুপি। নদীর স্থায়ী বিচরণ। রাতচড়া পাখি ডানা মেলে উড়ে যায় মোমরঙা আকাশের গায়ে। মাঝি তখনও অন্ধকার বুনতে বুনতে ডিঙি বায়। ক্রয় করে শীর্ণ বৃদ্ধার রূপোলি চাহনি। চাল, ডাল, নুনে ঘেরা তাদের যাবতীয় খিদের সংসার।
জীবন
অনেক দিন পর বৃষ্টি এল। শুকনো লেবুগাছের ডালে ফোঁটা ফোঁটা ঝরে পড়ছে জীবন। নতুন রোয়া হলুদ গাছে উর্বর মাটির মতো উথলে উঠছে কৃষকের ঘর-বাড়ি। কৃষক বধুর নবান্ন হাত। ছড়িয়ে পড়ে মাটির গন্ধ। একটা মুখরিত বৃষ্টিদিনে মেঠোবালক ঘন শ্যামল আকাশের পায়ে পায়ে ছুটে বেড়ায়। থিতু হয়ে বাঁশি বাজায় আষাঢ়ের বুকে। বাঁশির শব্দে নেচে ওঠেন পদাবলির শ্যাম-রাধা। বিদ্যাপতি, জ্ঞানদাস, গোবিন্দদাস। তারপর দিগন্ত রেখা ছুঁয়ে হেঁটে যায় তিলক কাটা বৈষ্ণব-বৈষ্ণবী। রাধেশ্যাম । ব্রজবাসীর বৈষ্ণবীয় দিন। কদম ফুলের পাপড়ির মতো তাদের অবিন্যস্ত জীবন। অখণ্ড ভিক্ষাপাত্র। তাদের ভিক্ষা-পাত্রে ভরা আছে ব্রজলীলা। আউশ ধানে ভরা জীবনের স্বাদ।
শূন্য
সূর্য অস্ত নামে। লাল-চেলি ডানা মেলে উড়ে যায় পাখি। দিনান্তের পর তারা স্তব্ধতা মেখে শূন্য করে ফিরে যায় তাদের খড়-কুটো যাপন গৃহে। সুপুরি গাছের সারি। মাঠ জুড়ে বিস্তীর্ণ গেরুয়া বিকেল। তারপর ঘরে ফেরে তারা। শুধু ঘনশ্যাম আকাশের গায়ে লেগে থাকে রাধাচূড়া মেঘ। তারা শ্যাম নাম জপে। দু'কলি গান বাঁধে ষোড়শীর বুকে। ভেসে যায় তারা জপমালা মুখে ফেরা পাখিদের ঠোঁটে। বৃদ্ধ শরীর নিয়ে অন্ধ ভিখারি তখনও পথের ধারে বসে থাকে। ঝাঁপ খোলা দোকানির ঘরে ভিক্ষা করে অন্ন। তারপর শূন্য চোখে ফিরে যায় ঘরে। এইভাবে দিন শেষ হয়। রাত শেষ হয়। শূন্য পৃথিবীর বুকে তারা রেখে যায় বেদনার ইতিকথা। অনন্ত শূন্যে ভরা এক শূন্য শূন্য বৃত্তাকার পূর্ণতা।
ABOUT THE AUTHOR
Hello We are OddThemes, Our name came from the fact that we are UNIQUE. We specialize in designing premium looking fully customizable highly responsive blogger templates. We at OddThemes do carry a philosophy that: Nothing Is Impossible
মাঝি, শূন্য, জীবন ভালো লাগলো।
ReplyDeleteভাললাগল ।
ReplyDeleteবেশ ভালো লাগলো, সুন্দর চিত্রকল্প।
ReplyDelete